যুক্তরাষ্ট্রে এসাইলাম প্রার্থীদের আটক রাখা যাবে না

আইস বিলুপ্তির দাবিতে ক্যালিফোর্নিয়ার সানদিয়েগো ফেডারেল ভবনের সামনে বিক্ষোভ। ছবি-এনআরবি নিউজ।

মার্কিন  ফেডারেল কোর্টের নির্দেশ

যুক্তরাষ্ট্রে এসাইলাম প্রার্থীদের আটক রাখা যাবে না

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে

ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (Immigration and Customs Enforcement) তথা আইস বিলুপ্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী তুমুল আন্দোলনের মধ্যেই ২ জুলাই সোমবার এক রুলিংয়ে সীমান্ত অতিক্রমের পরই এসাইলাম প্রার্থীদের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিল মার্কিন ফেডারেল কোর্ট। ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ফেডারেল কোর্টের জজ জেমস বোসবার্গ (Judge James Boasberg, on the U.S. District Court for the District of Columbia) প্রদত্ত এই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে এখন থেকে এসাইলাম প্রার্থীদের ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার করে অনির্দিষ্টকালের জন্যে ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখা যাবে না।

আদেশে বলা হয়েছে, এসাইলাম তথা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার সময় যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম হন যে, তাকে নিজ দেশে ফেরৎ পাঠালে অবর্ণনীয় দুর্দশা অথবা প্রাণহানীর ঝুঁকিতে পড়বেন, তাহলে তাকে প্যারলে মুক্তি দিতে হবে। তবে আবেদনকারিদের মধ্যে যারা ফ্লাইটে ঝুঁকিপূর্ণ কিংবা সামাজিক অশান্তির কারণ বলে বিবেচিত হবেন, তাদের এসাইলামের আবেদন নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আটক রাখা যাবে।

বিচারকের এই নির্দেশে এটাই প্রমাণিত হলো যে, নিজেদের তৈরি আইন নিজেরাই লংঘন করছিল হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় তথা আইসের এজেন্টরা-এমন মন্তব্য করেছেন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ইমিগ্র্যান্টস রাইটস প্রজেক্টের স্টাফ এটর্নী মাইকেল ট্যান।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত অতিক্রমকারিদের ঢালাওভাবে ডিটেনশন সেন্টারে রাখার ঘটনাবলীকে  যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পরিপন্থি হিসেবে অভিহিত করে আদালতের শরনাপন্ন হয় আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, নিজ দেশে নিরাপত্তাহীনতার জন্য ভিটে-মাটি ও স্বজন ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর যারা এসাইলাম প্রার্থনা করেন, তাদেরকে এসাইলামের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্যারলে মুক্তি দেয়ার কথা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সে রীতি তোয়াক্কা না করে সকলকে গ্রেপ্তার করে অনির্দিষ্টকাল ডিটেনশন সেন্টারে রাখার অঘোষিত নির্দেশ জারি করেন।

মামলার শুনানির সময় বাদিপক্ষের এটর্নী তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের মাধ্যমে মাননীয় আদালতকে অবহিত করেন যে, প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে ৯০ ভাগ এসাইলাম প্রার্থীকে প্যারলে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু ট্রাম্প আমলে সে হার ০ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশেষ করে মিশিগানের ডেট্রয়েট, টেক্সাসের এল পাসো, লসএঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক এবং ফিলাডেলফিয়াস্থ আইসের ফিল্ড অফিসের আওতায় একজনকেও প্যারলে মুক্তি দেওয়া হয়নি। কয়েক হাজার বাংলাদেশিকেও ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছে এসব স্থানে।

বিজ্ঞ বিচারক তার ৩৮ পাতার মতামতে এহেন অবস্থাকে কোনভাবেই বিধিসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেন। নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতিটি আবেদনকে আলাদাভাবে পর্যালোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্যে। অস্থায়ী এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী করা হবে কিনা সে ব্যাপারে আরেকটি শুনানির তারিখ দেওয়া হয়েছে ১০ জুলাই। অর্থাৎ, ১০ জুলাইয়ের মধ্যে যারা গ্রেপ্তার হয়ে এসাইলাম প্রার্থনা করবেন, তাদেরকে প্যারলে মুক্তি দিতেই হবে।
 
মে মাসে ট্রাম্পের আরেক নির্দেশে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে বেআইনীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারিদের সাথে থাকা শিশু সন্তানকে কেড়ে নেয়ার পর ওইসব অভিভাবকের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের মামলা হয়েছে। শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার ঘটনাকে অমানবিক ও বর্বরতার সামিল হিসেবে সারা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ হচ্ছে। এ অবস্থায় ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন। ফেডারেল কোর্টও নির্দেশ দিয়েছে ৩০ দিনের মধ্যে ওইসব শিশুকে অভিভাবকের কাছে ফেরৎ দেয়ার জন্যে। তবুও কেড়ে নেওয়া শিশুরা এখন পর্যন্ত অভিভাবকের সাথে মিলিত হতে পারেনি।

তবে ফেডারেল জজের সর্বশেষ এ সিদ্ধান্তে আইসের অমানবিক আচরণে কিছুটা পরিবর্তন ঘটবে বলে অনেকে আশা করছেন। প্রসঙ্গত, আইস বিলুপ্তির দাবিতে সারা আমেরিকায় বিক্ষোভ চলছে। ইউএস সিনেটের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অনেক কংগ্রেসম্যানও রাজপথে নেমেছেন আইস বিলুপ্তির দাবিতে।

সম্পর্কিত খবর