ব্যায়াম করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে

সংগৃহীত ছবি

ব্যায়াম করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ

বিশ্বব্যাপী একশত কোটির বেশী মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। বাংলাদেশে ২০ ভাগ প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের রক্তচাপ বেশী। বয়ষ্কদের ক্ষেত্রে এ হার ৪০ ভাগের বেশী। এটি নিরবে, নিভৃতে মানুষকে ধাবিত করে ভয়ানক পরিণতির দিকে।

স্ট্রোক, হৃৎপিন্ড বিকল হয়ে যাওয়া কিংবা করোনারী ধমনী সংক্রান্ত হৃদরোগে সিংহভাগ দায়ী এই উচ্চ রক্তচাপ। এজন্য উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক বা সাইলেন্ট কিলার।  

ব্যায়ামের সুফল

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সক্রীয় থাকা বা নিয়মিত ব্যায়াম করা দরকার। ব্যায়াম করলে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়, ফুসফুস চাঙ্গা থাকে।

ফলে মাংসপেশীতে রক্ত পরিবাহিত হয় এবং সহজে রক্ত ফুসফুসে ফিরে আসে। রক্তজালিকা প্রসারিত হয় ফলে কোষে কোষে রক্ত সহজেই অক্সিজেন বহন করতে পারে। এতে হৃদপেশী শক্তিশালী হয়। এ কারণে হৃৎপিন্ডের জন্য রক্তসঞ্চালন করা সহজতর হয়। রক্তনালীর ওপর কম চাপ পড়ে।  

গবেষণা বলছে, শরীরচর্চা বা ব্যায়োমের ফলে গড়ে ৩.৯ ভাগ সিস্টোলিক ও ৪.৫ ভাগ ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কমে যায়। শুধু রক্তচাপই কমে তা নয়, এর ফলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিচে নেমে আসে। ফলে রক্ত নালীর গায়ে চর্বি জমার সুযোগ কমে যায়। যা প্রকারান্তরে হৃদরোগের হাত থেকে শরীরকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

শরীরচর্চার ধরণ ও মাত্রা
ব্যায়াম হতে পারে বিভিন্ন ধরণের। হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, সাঁতার কাটা এসব হতে পারে ধরণ। এগুলো হলো অ্যারোবিক। এর সোজা সাপ্টা মানে হচ্ছে, অক্সিজেন সহযোগে শরীরচর্চা করা। এতে হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস একটা নির্ধারিত লয়ে বাড়তে থাকবে।

এনোরোবিক শরীরচর্চা অন্য ধরণের। এতে হঠাৎ করে শরীরে শক্তির প্রয়োজন পড়ে। খুব দ্রুততার সাথে দৌড়ানো, ভারী ওজন ওঠানো এগুলো এনোরোবিক শরীরচর্চা। এটি সবার জন্য উপযোগী নয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কিংবা হৃৎপিন্ডের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন এরোবিক শরীরচর্চা। এর মাঝে একটা বয়সের পর হাঁটা হলো সর্বোত্তম। মাত্রা হবে মাঝারী থেকে উচ্চ মাত্রার। আয়েশী মেজাজে হাঁটার কোনো মানে নেই। ঘাম ঝরিয়ে জোর কদমে হাঁটতে হবে।

কতটুকু হাঁটবেন?
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি বা আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন ২০১৯ সালে প্রকাশিত রিপোর্টে সুপারিশ করেছে ৪০ মিনিট মাঝারী থেকে উচ্চ মাত্রার শরীরচর্চা করার জন্য। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন এমন শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিয়েছে তারা। যদি একাধারে ৪০ মিনিট শরীরচর্চা করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায় তবে ১০-১৫ মিনিটের তিন থেকে চারটি সেশন করার বিকল্প পরামর্শ তারা দিয়েছেন। আমেরিকান কলেজ অফ স্পোর্টস মেডিসিনের সুপারিশও এমনটি।

সক্রীয় থাকতে করণীয়
নিজেকে সক্রীয় রাখতে পারলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহজসাধ্য হয়। এ  জন্য আরো কিছু বিষয় শরীরচর্চার পাশাপাশি অন্তর্ভূক্ত করুন। যেমন:

● লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করা ভালো। অনেকেই দু-তিনতলায় ওঠার জন্য দীর্ঘ সময় লিফটের জন্য করিডরে অপেক্ষমাণ থাকেন। এই অপেক্ষা না করে ক্যালরি খরচ করুন। এতে শরীর ভালো থাকবে।

● গাড়ি ছেড়ে মাঝেমধ্যে হেঁটে অফিসে যেতে পারেন। অথবা অফিসের একটু দূরে নেমে হাঁটতে পারেন।

● বাড়ির টুকটাক কাজে সহযোগিতা করতে পারেন।

● প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটা সুস্থ থাকার অন্যতম নিয়ামক। কত কদম হাঁটছেন, ফোনে অ্যাপস ব্যবহার করে এই হিসাব রাখা যায়।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য যাপিত জীবনে বেশ পরিবর্তন আনতে হয়। নিজেকে নিয়মিত সক্রীয় রাখা এবং শরীরচর্চা তার মাঝে নি:সন্দেহে সর্বোত্তম।

লেখক : ক্লাসিফাইড মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট 
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), ঢাকা
চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা।

news24bd.tv/arkabul