টিপু হত্যার বিনিময়ে ৫ মামলা থেকে অব্যাহতির চুক্তি

মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ ওরফে শুটার মাসুম

আদালতের জবানবন্দিতে শুটার মাসুম 

টিপু হত্যার বিনিময়ে ৫ মামলা থেকে অব্যাহতির চুক্তি

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর শাহজাহানপুরে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাতিম তোফাজ্জল হোসেন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় মাসুমকে কারাগারে পাঠানো হয়।  

এর আগে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মাসুমকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে জানান, মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ ওরফে শুটার মাসুম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক। এ কারণে তাঁর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন জানান তদন্ত কর্মকর্তা। পরে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন তাঁর খাসকামরায় আসামির জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।  

মাসুম আদালতকে বলেন বলেন, এলাকায় শেয়ারে ডিশ ব্যবসা করতেন তিনি।

সেখান থেকে যা আসত, তা দিয়ে তাঁর সংসার ও মামলার খরচ মেটানো সম্ভব ছিল না। মামলা ও গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কায় প্রতিনিয়ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হতো। শুধু তাঁর মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। সব দিক বিবেচনা করে টিপুকে হত্যা করতে রাজি হন মাসুম।  

হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল প্রসঙ্গে মাসুম বলেন, ঘটনার তিন দিন আগে কমলাপুরের ইনল্যান্ড ডিপো এলাকায় অপরিচিত এক ব্যক্তি এসে মাসুম ও তার সহযোগীকে একটি মোটরসাইকেল ও অস্ত্র দিয়ে যায়। ঘটনার আগের দিনও এজিবি কলোনিতে গিয়ে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ফিরে আসে মাসুম ও তার সহযোগী। পরে ২৪ মার্চ রাতে কিলিং মিশন শেষ করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে সেই অস্ত্র ও মোটরসাইকেল ওই ব্যক্তির কাছে জমা দেন।

মাসুম আদালতকে বলেন, রূপালী ক্লাবের ওই বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তবে ওই বৈঠকেই টিপুকে হত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে তিনি শামীমের কাছে শুনেছেন। তারপর শামীমই তাকে জানান, ‘বড় ভাই (মুসা) বলছে টিপুকে শেষ করে দিতে হবে। টিপুকে মারতে পারলে মাসুমের ঝুলে থাকা মামলা নিষ্পত্তি, যাবতীয় খরচ ও পরবর্তী সময়ে অন্যান্য সুবিধা-অসুবিধা দেখা হবে।

জবানবন্দিতে মাসুম আরও বলেন, ঘটনার আগের দিনও টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। ঘটনার দিন শাহজাহানপুর ইসলামী হাসপাতালের সামনে মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে গুলি করলে টিপু এবং তাঁর ড্রাইভার দুজন আহত হন। একটি গুলি রিকশারোহী এক মেয়ের গায়ে লাগে। তবে অন্য কেউ আরও গুলি করেছিল কি না, সে বিষয়ে মাসুম কী বলেছে তা জানা যায়নি। ঘটনাস্থল রেকি করায় কয়েকজন ছিল বল মাসুম বলেছেন।  

প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় সড়কের ওপর প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু। এছাড়া ঘটনাস্থলে একজন নিরীহ কলেজছাত্রী এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হয়। পেশাদার কিলার বাহিনী এক থেকে দেড় মিনিটের অপারেশন শেষে পালিয়ে যায়। ১২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে টিপুর দিকে। এর মধ্যে তার শরীরে সাত রাউন্ড গুলি লাগে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন।

এর আগে হত্যা মামলার তদন্তে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেছিলেন, টিপুকে হত্যার জন্য পাঁচ দিন আগে মাসুমকে ভাড়া করা হয়।

এদিকে গত ২ এপ্রিল এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও ১০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক (৫২), পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), মো. নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮) এবং মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে (৫১) গ্রেফতারের কথা জানায় র‌্যাব। এ সময় উদ্ধার করা হয় নজরদারির কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল এবং হত্যার জন্য দেওয়া ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য সামগ্রী। গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এই গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করে।

ওইদিন দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু খুনের পরিকল্পনা হয় দুবাইয়ে। পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন বিদেশে পলাতক কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। খুনের দর হাঁকা হয় ১৫ লাখ টাকা। শেষমেশ এই দরেই দফারফা হয়। দেশে বসে খুনের বাস্তবায়ন করে পেশাদার কিলারচক্র। হত্যার আগে ও পরে টিপুর গতিবিধি রেকির আপডেট মেসেজ আদান-প্রদান করে মাস্টারমাইন্ড ওমর ফারুকসহ তার সহযোগীরা।  

আসামি চারজনই ২০১৩ সালে হত্যার শিকার যুবলীগ নেতা মিল্কীর অনুসারী বলে জানিয়েছে র‌্যাব। মতিঝিল এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে হত্যার পরিবর্তে হত্যার রাজনীতি থেকেই এ খুন হয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।

news24bd.tv/আলী