এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে

তৃষ্ণার্ত বোধ না করলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর পানি পান করুন

এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ   

এখন রোদের প্রচন্ড উত্তাপ। সারাদেশেই প্রচুর গরম পড়েছে। এই সময় নানা অসুখ-বিসুখের পাশাপাশি গরমজনিত হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে। হিট স্ট্রোক গরমের সময়ের একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যা যাতে সাবধান থাকা উচিত।

হিট স্ট্রোক কী?
প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপর হলে তাকে হিট স্ট্রোক বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপ কমে যায়।

কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান বা পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং হিট স্ট্রোক দেখা দেয়।

কারা আক্রান্ত হতে হতে পারে?
প্রচণ্ড গরমে ও আর্দ্রতায় যে কারও হিট স্ট্রোক হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। যেমন—

* শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিরা যেহেতু প্রায়ই বিভিন্ন রোগে ভোগেন কিংবা নানা ওষুধ সেবন করেন, যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
* যাঁরা দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদে কায়িক পরিশ্রম করেন, তাঁদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। যেমন কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক।
* শরীরে পানিস্বল্পতা হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
* কিছু কিছু ওষুধ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় বিশেষ করে প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ, বিষণ্নতার ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি।

লক্ষণ
* দেহের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়।
* শরীর থেকে ঘাম বের হয় না বা বন্ধ হয়ে যায়।
* ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায়।
* নিশ্বাস দ্রুত হয়।
* নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
* রক্তচাপ কমে যায়।
* খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্নতা ইত্যাদি দেখা দেয়।
* প্রস্রাবের পরিমাণ যথেষ্ট কমে যায়।
* রোগী শকেও চলে যেতে পারে, এমনকি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে।

এই সময় যা করবেন
* তৃষ্ণার্ত বোধ না করলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর পানি পান করুন। সবসময় সঙ্গে খাবার পানি সঙ্গে রাখুন।
* যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান করুন। বাইরে যেতে হলে মাথার জন্য চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করুন।
* দিনের বেলা বাইরে বেরোলে সাদা বা হাল্কা রংয়ের, ঢিলেঢালা, সূতি কাপড়ের জামা পরুন।
* টুপি বা কাপড়, তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন৷ সঙ্গে ছাতা রাখুন, পায়ে জুতো অথবা চটি পরে তবেই বাইরে বেরোন।
* তরমুজ, শশার মতো ফল বেশি করে খান।
* বাড়িতে তৈরি লেবুপানীয় পান করুন।
* গৃহপালিত পশুদের ছায়ায় রাখুন, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়ান।
* স্থানীয় আবহাওয়ার বার্তার দিকে খেয়াল রাখুন।
* অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক অথবা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নিন।

যা করবেন না
* যতদূর সম্ভব প্রখর সূর্যালোকে বাইরে না বেরুনোর চেষ্টা করুন।
* খুব পরিশ্রমসাধ্য, দিনের বেলা এমন কাজ না করাই ভাল।
* দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে শিশু ও গৃহপালিত পশুদের রাখবেন না।
* বেশি প্রোটিনযুক্ত বা মশলাদার খাবার খাবেন না।
* খোলামেলা স্থানে বানানো শরবত, পানীয় বা খাবার খাবেন না।
* তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয় যেমন-চা ও কফি এরিয়ে চলুন।

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে যা করবেন
* আক্রান্ত ব্যাক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ভেতর বা ছায়া রয়েছে এমন ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যান।
* গায়ের জামাকাপড় খুলে ফ্যানের বাতাস দিন বা এসি চালিয়ে দিন।
* ভিজে কাপড় দিয়ে সারা শরীর মুছিয়ে দিন৷
* লবণ পানি নুন- চিনির শরবত, খাবার স্যালাইন খাওয়াতে থাকুন৷ তবে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে এসব খাওয়াবেন না। সম্পূর্ণ জ্ঞান ফেরার পরই খাবার বা পানি দেওয়া যাবে আক্রান্তকে৷
* অবস্থার উন্নতি না হলে আক্রান্তকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান।  

 লেখক : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক এমিরিটাস, ইউজিসি অধ্যাপক, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।