সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ, সম্পাদক দুলাল

সভাপতি মোমতাজ, সম্পাদক দুলাল

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ, সম্পাদক দুলাল

অনলাইন ডেস্ক

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দুপুরে হট্টগোল, ভাঙচুর-মারামারি হয় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে। রাত ১০টায় ঘোষিত ফলাফলে সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও অ্যাডভোকেট মো. আব্দুন নূর দুলাল।  

দ্বিতীয় দফায় গঠন করা নির্বাচন উপ-কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. অজি উল্লাহ এ ফলাফল ঘোঘণা করেন।

 

পেশাজীবী সংগঠনের এই নির্বাচনে আওয়ামী পন্থীরা ‘সাদা প্যানেল’ এবং বিএনপি পন্থীরা ‘নীল প্যানেল’  হিসেবে পরিচিত। এবার সমিতির ১৪ পদে সভাপতি-সম্পাদকসহ সাত পদে সাদা প্যানেল ও কোষাদক্ষ্যসহ সাত পদে নীল প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

সভাপতি-সম্পাদক পদ ছাড়া সাদা প্যানেলের নির্বাচিত প্রার্থীরা হলেন- সহসভাপতি পদে মো. শহীদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন। আর এ প্যানেল থেকে সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফাতেমা বেগম, শাহাদাত হোসাইন (রাজিব) ও সুব্রত কুমার কুণ্ডু।

 

অন্যদিকে নীল প্যানেল থেকে কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও দুটি সহ-সম্পাদক পদে যথাক্রমে মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান নির্বাচিত হয়েছেন। এ প্যানেল থেকে সদস্য পদে নির্বাচিতরা হলেন- কামরুল ইসলাম, মাহদীন চৌধুরী, মো. গোলাম আক্তার জাকির ও মো. মঞ্জুরুল আলম (সুজন)।

ঘোষিত ফলাফলের বিষয়ে জানতে চাইলে রুহুল কুদ্দুস কাজল জানান, এ ফলাফল সম্পূর্ণ অবৈধ। আজকে (বুধবার) সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি যে, নতুন যে নির্বাচন উপকমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের এ কমিটি গঠন করার কোনো ক্ষমতা নেই। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিগত কার্যকরী কমিটিতে ১৩ জন সদস্য। সাতজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন উপকমিটি গঠন করা যায় না। এ ফলাফল আমি প্রত্যাখ্যান করছি।

ফলাফল ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বিজয়ী সম্পাদক মো. আব্দুন নূর দুলাল জানান, সত্যের জয় হয়েছে। এর বেশি আর কিছু বলব না, আলহামদুলিল্লাহ। অতি সাধারণ একটা কথা, আমি দলনিরপেক্ষভাবে সমিতি চালাব, ইনশাআল্লাহ।

গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ভোটগ্রহণ হয়। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি উপ-কমিটি নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করলেও গত দেড়মাসে এ কমিটি ফলাফল ঘোষণা করতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে মোট ৮ হাজার ৬২৩ জন ভোটারের মধ্যে ৫ হাজার ৯৮৩ জন ভোট দেন।

গত ১৫-১৬ মার্চ ভোটের পর ১৭ মার্চ বিকাল সাড়ে চারটা থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। তবে সম্পাদক পদে ভোট গণনায় ত্রুটির অভিযোগ আনেন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা। পরে ওইদিন মাঝ রাতে সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়কের কাছে আবেদন করেন সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রর্থী মো. আবদুন নুর দুলাল। একপর্যায়ে ফলাফল ঘোষণা না করেই স্থান ত্যাগ করেন নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির সদস্যরা।  

এর একদিন পর জানা যায় এ ওয়াই মশিউজ্জামান নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী দাবি করেন, এ ওয়াই মশিউজ্জামানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। পরবর্তীতে সমিতির সভাপতি-সম্পাদকদের নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সমাধানের উদ্যোগ নেন বিগত কমিটির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল।  

তারপরও সমাধান না আসায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে আকস্মিক এক সংবাদ সম্মেলনে এসে সমিতি সাবেক নেতা অজি উল্লাহ ঘোষণা দেন যে, সাত সদস্যের নতুন নির্বাচন উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি বুধবার ভোট পুনর্গণনা করে ফলাফল ঘোষণা করবে। তবে এ উপকমিটিকে অবৈধ অ্যাখ্যা দিয়ে  বুধবার দুপুরে একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করেন নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।  

এরপর বিকালে মো. অজি উল্লাহ নেতৃত্বাধীন ‘নির্বাচন উপ-কমিট ‘ভোট পুনর্গণনার জন্য আইনজীবী সমিতি ভবনের তিন তলায় সম্মেলন কক্ষে ঢুকতে গেলে বাধা হয়ে দাঁড়ান বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ কক্ষেই অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ব্যালটসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রাখা আছে। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে প্রথমে ধাক্কধাক্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা তালা ভেঙে কক্ষে ঢুকে পড়েন। তখন কক্ষের বাইরে থাকা বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা কক্ষের কাঁচ ভাঙচুর করে কক্ষের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেন। তখন কক্ষের ভেতরে-বাইরে থাকা আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা বিদ্যুৎ চালু করতে গেলে হাতাহাতি, কিলঘুষির ঘটনা ঘটে।  

দুই পক্ষকেই এ সময় পাল্টাপাল্টি স্লোগানও দিতে দেখা যায়। উদ্ভুত পরিস্তিতিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সরে গেলে ভোট গণনা শুরু করেন অজি উল্লাহর নেতৃত্বাধীন নির্বাচন উপকমিটি। এরপর রাত ১০টায় ফল গোষণা করেন মো. অজি উল্লাহ।  

news24bd.tv/কামরুল