শিক্ষামন্ত্রীর বড়ভাইসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রতীকী ছবি

শিক্ষামন্ত্রীর বড়ভাইসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ৪৮ একর সরকারি সম্পত্তি প্রতারণার মাধ্যমে রেজিস্ট্রি দলিল করে মালিকানা হস্তান্তর করার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর বড়ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. জেআর ওয়াদুদ টিপুসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার চাঁদপুরের সহকারী জজ মো. মহিউদ্দিনের আদালতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই তৎকালীন সাবরেজিস্ট্রার অসীম কল্লোলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ডা. জেআর ওয়াদুদ টিপুসহ প্রথম ৫ জন হাইমচরের নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরের নদী সিকস্তি ৪৮ দশমিক ৫২৫০ একর ভূমি ৬টি দলিলে মার্চ, এপ্রিল ও জুলাই মাসে সাফ-কবলা ও দানপত্রের মাধ্যমে দ্বিতীয়পক্ষের বিবাদীদের কাছ থেকে নিজেদের নামে লিখে নেন।

উক্ত ভূমি সিএস জরিপকালে নদী সিকস্তি অবস্থায় ছিল।

পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে সরকারি স্বত্বস্বার্থ বজায় রাখার জন্য ও রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ৪/৭৭-৭৮ রিসেটেলমেন্ট মামলার মাধ্যমে হাতনকশা তৈরি করে এবং হাতে লেখা এ, বি, সি, ব্লক নামকরণে একটি জমাবন্দি তৈরি করা হয়। সেই সঙ্গে চাষাবাদ করার জন্য স্থানীয় কৃষকদের বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো প্রকার কবুলিয়তনামা দলিল সম্পাদিত হয়নি।

সরকারি স্বার্থে দাখিলার মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব আদায় করা হতো। এ অবস্থায় উক্ত জমিতে ভোগ দখলরত চাষি কোনো স্বত্বস্বার্থ উপজাত হয়নি।

সিএস, আরএস, বিএস জরিপকালেও ওই জমি জলমগ্ন থাকায় কোনো জরিপ করা সম্ভব না হওয়ায় ভূমির দাগ খতিয়ান ও মৌজার নম্বর হয়নি। এ অবস্থায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক গত বছরের ৩১ আগস্ট এ মৌজার জরিপকাজ সম্পন্ন করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে চিঠি দেন।

নালিশি ভূমিতে ২য়পক্ষের বিবাদীগণের কোনো প্রকার স্বত্বস্বার্থ ছিল না, এখনো নেই। রিসেটেলমেন্ট মোকদ্দমামূলে সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে তাদের শুধুমাত্র ভোগদখল করার জন্য দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ২য়পক্ষের বিবাদীরা উক্ত ভূমির প্রতি অন্যায় ও বেআইনিভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য প্রথমপক্ষের বিবাদীগণকে একেআর বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করে হস্তান্তর করে বলে বাদীপক্ষ সম্প্রতি জানতে পারে। হস্তান্তরের এমন কোনো অধিকার তাদের নেই।

নালিশে আরও উল্লেখ করা হয়, এই ৪৮ একর সম্পত্তি গ্রহীতা বিবাদীগণ এবং অপর বিবাদীরা দাতা হিসেবে হাইমচর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিলগুলো সৃজন করায় সরকারপক্ষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তাই এ দলিলগুলো যোগসাজশ, তঞ্চকতামূলক হওয়ায় তা অকার্যকর ও বাতিল করার আবেদন জানানো হয়। সেই সাথে মোকদ্দমার খরচ ও ক্ষতিপূরণও চাওয়া হয়েছে।

গ্রহীতা হিসেবে জমি দখলে নেওয়ার কারণে মামলায় প্রথমপক্ষের বিবাদীরা হলেন- সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন আহমেদ, হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী, মো. মুনছুর আহম্মদ, শিক্ষামন্ত্রীর চাঁদপুরের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।

সাফ-কবলা ও দানপত্রমূলে জমিদাতা হিসেবে দ্বিতীয়পক্ষের বিবাদী করা হয়েছে হাইমচরের মৃধারকান্দি এলাকার আ. ফারুক সরদার, আবুল সরদার, ঢাকার মিরপুরের নুর মোহাম্মদ, মাসুম হোসেন, শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের পিয়ারা বেগম, আকলিমা বেগম, তছলিমা বেগম, মো. সুমন মিয়া রিদয়, ফাহিমা আক্তার, মো. শরীফ মিয়া, হাইমচরের নূর মোহাম্মদ, লক্ষ্মীপুরের জয়নাল আবেদীন মোল্লা, মিরপুরের মাজেদা বেগম, মো. নাছির মৃধা, মো. রাসেল, হাসিনা আক্তার, শাহীনা বেগম, মোহাম্মদপুরের মো. সালাউদ্দিন, মো. ফিরোজ ইকবাল।

তৃতীয়পক্ষের বিবাদী করা হয়েছে হাইমচর উপজেলার সাবেক সাব-রেজিস্ট্রারকে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দাউদ হোসেন চৌধুরী জানান, আমরা সরকারপক্ষে মামলা দায়ের করেছি- সরকারি সম্পত্তি সরকারের কাছে নিয়ে আসার জন্য। এ মামলায় ৫ জন জমি গ্রহীতা এবং ১৯ জন জমিদাতা এবং একজন সাবরেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়েছে।

তিনি জানান, আমরা ৪৮ একর জমির দলিল পেয়েছি; শুধুমাত্র এ জমি উদ্ধারেই মামলা হয়েছে। উনারা আরও জমি নিয়েছেন কিনা বা আরও বেশি দখল করেছেন কিনা তা এখানে আসেনি।

সাব রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি জানেন এখানে জরিপ হয়নি। এগুলো সরকারি জমি। তারপরও তিনি কীভাবে রেজিস্ট্রি করলেন। যদি আমরা রায় পাই তখন তো এ দলিলগুলো বাতিলের জন্য তাকে অর্ডার দেবে।

সাবেক সাবরেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল এ সম্পর্কে বলেন, আগের যে সাবরেজিস্ট্রার ছিলেন তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে হওয়ায় আমরা ইতোমধ্যেই তার অপকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।

news24bd.tv/কামরুল