ঈদের দিন কী খাবেন, কী খাবেন না

ঈদে খাবার খান পরিমাণমতো

ঈদের দিন কী খাবেন, কী খাবেন না

পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ

এক মাস সিয়াম সাধনা বা রমজানের রোজা শেষে আসছে পবিত্র ঈদ উল ফিতর। দীর্ঘদিন রোজা রাখার পর এই ঈদে খাবার দাবার বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। নচেৎ বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি বা গ্যাস, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি অসুখ বিসুখ দেখা দিতে পারে। আসুন, জেনে নেই, ঈদের দিন কী খাবেন, কী খাবেন না।

 

ঈদের সকালের খাবার
ঈদের সকালের নাশতায় রুটির পাশাপাশি থাকতে পারে হালকা তেলে ভাজা পরোটা বা সবজির নরম খিচুড়ি। তার সঙ্গে মুরগির তরকারি বা ডিম ভুনা রাখা যায়। তবে সকালের খাবারকে স্বাস্থ্যকর বানাতে একটা সবজি রাখতে হবে অবশ্যই। সব শেষে মিষ্টি খাবারে থাকতে পারে স্বল্প মিষ্টিযুক্ত সেমাই, পায়েস, ফিরনি, পুডিং ইত্যাদি।

মধ্যসকাল ও বিকেলের নাশতা
ঈদের দিনে অনেকে সকাল ও দুপুর, দুপুর ও রাতের মাঝের সময়টাতে হালকা কিছু খান। সে ক্ষেত্রে ফুচকা ছাড়া বা অল্প ফুচকা দেওয়া চটপটি খেতে পারেন। যেহেতু এখন বেশ গরম, তাই এ সময়ের সব থেকে পুষ্টিকর খাবার হলো তাজা ফল বা ফলের সালাদ। এ ছাড়া ফলের জুস, বেলের শরবত, ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে, তাতে শরীরে পানিস্বল্পতা তৈরি হবে না। আবার চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ, স্টু জাতীয় খাবারও রাখা যায়।

দুপুরের খাবার
ঈদের দিনে দুপুরের খাবারে খুব হালকা তেলের পোলাউ বা খিচুড়ি খাওয়া যাবে। সবচেয়ে ভালো হয় পোলাউ বা খিচুড়িতে সবজির ব্যবহার থাকলে। এই গরমে ডুবো তেলে ভাজা বা অতিরিক্ত মসলাদার খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। লাল মাংসের পরিবর্তে বেক করা কাবাব বা গ্রিল করা মুরগি ভালো খাবার হবে। ঈদের দিনে সুস্থ থাকতে রান্নার কৌশলের পরিবর্তনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। রান্না পদ্ধতির কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে যেকোনো মজাদার খাবারই খাওয়া যায়। মাছ বা মাংস ডুবো তেলে না ভেজে স্বাস্থ্যকর উপায়ে এয়ারফ্রায়ারে তেল ছাড়া ভেজে খেতে পারেন। এ ছাড়া দুপুরের অন্য খাবারের পাশাপাশি কম তেল মসলার চায়নিজ সবজি ও সালাদ খুবই স্বাস্থ্যকর পদ। রান্না করা যেতে পারে সবজির কোর্মাও। কোমল পানীয়ের বদলে বোরহানি বা মাঠা খাওয়াই উত্তম, খাবারের পর রাখতে হবে টক দই।

রাতের খাবার
কেউ যদি মনে করেন, রাতে ভালো খাবার খাবেন, সে ক্ষেত্রে মাছ বা মাংসের ভিন্নধর্মী রান্নার সঙ্গে ভাত খেলে মেন্যুটা অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর হবে। ঈদের রাতে দাওয়াতে গেলেও ভালো খাবার, আবার বাড়িতে থাকলেও ভালো খাবার। তাই রাতের খাবারের মেন্যু একটু ভিন্নভাবে করলে ভালো। মাংসের একটি স্বাস্থ্যকর পদ বা বাসায় থাকলে মাছের একটি পদ হতে পারে আদর্শ খাবার। সঙ্গে একটি পদ সবজি রাখতে পারেন।

যা করবেন

  • গুরুপাক খাবারের সঙ্গে শসা, লেবু, টমেটো ইত্যাদির সালাদ রাখুন।
  • তিনবেলা ভারী খাবার না খেয়ে যেকোনো একবেলা হালকা খাবার, যেমন—সবজির স্যুপ, সবজি ও রুটি রাখুন।
  • প্রত্যেক প্রধান খাবারের ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন, এটা বিপাকক্রিয়ার হার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • খাবার কিছু সময় পর তালিকায় লেবু পানি বা টক দই রাখলেও তা হজমপ্রক্রিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • ঈদের দিন মধ্যসকাল বা বিকেলের নাশতায় টকজাতীয় মৌসুমি ফল রাখুন।  
  • পানীয় হিসেবে ডিটক্স ওয়াটার খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
  • ঈদে তুলনামূলক বেশি খাওয়া হয়। সে জন্য অবশ্যই সকালে-বিকেলে ব্যায়াম করুন বা হেঁটে অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার চেষ্টা করুন।

যা করবেন না

  • অনেকেই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। এটা করবেন না।
  • দিনে ৭০ গ্রামের বেশি মাংস খাওয়া উচিত নয়। প্রতি বেলায় ঘরে রান্না করা মাংস ২-৩ টুকরার বেশি খাবেন না।
  • বেশি তেলে বা দৃশ্যমান জমানো চর্বি সহ মাংস রান্না করবেন না। রান্না করতে হবে কম তেলে।
  • নানা সোডা পানি বা সফট ড্রিংকস পান নয়, এসবের পরিবর্তে চিনি ছাড়া নানা মৌসুমি ফলের জুস, বোরহানি গ্রহণ করা উত্তম।
  • ঘিয়ে ভাজা পরোটার পরিবর্তে সেঁকা রুটি খেতে পারেন।
  • ঈদে বাইরের সব খাবার এড়িয়ে চলুন।

 news24bd.tv/desk