মুজিবশতবর্ষে ঠাকুরগাঁও সদর এলাকায় হতদরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এ টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্দের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত ভূমিহীনরা অবৈধ টাকা দিতে না পারায় হত-দরিদ্রদের ঘর থেকে বের করে দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। ঘর পেতে হলে তাদেরকে দিতে হচ্ছে ঘরপ্রতি ২০-৫০ হাজার টাকা; না দিলে ঘর পাচ্ছেন না তারা।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের বড়দেশ্বরীতে ভূমিহীনদের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৮টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের ধর্মপুর ভদ্রপাড়া এলাকার ১৮ বছর বয়সী এতিম সবুজ অভিযোগ করে বলেন, তাদের চাহিদা মত টাকা দিতে না পারায় তাকেও ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ঘর বাতিল হওয়া ভুক্তভোগী জনি ইসলাম সদর এসিল্যান্ডকে অভিযোগ করেন।
ঘর বাতিল হওয়া এতিম সবুজ বলেন, আমার মা-বাবা নাই। অন্যের বাড়ির বারান্দায় রাতে ঘুমাই। ইমান আলী মেম্বার গুচ্ছ গ্রামে আমায় একটা ঘর দেন। পরে এলাকার মিজান, কুদরত আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। মাঠে কাজ করে তাদের ৭ হাজার টাকা দেই। কিন্তু বাকি টাকা দিতে পারিনি বলে তারা আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়।
প্রতিবন্ধী রহিমা অভিযোগ করে বলেন, কুদরত, মিজান আমাদের কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি টাকা দিতে পারিনি বলে তারা আমার ঘরের তালা ভেঙ্গে আসবাবপত্র বের করে দিয়ে অন্যজনকে ঘরে দিয়ে দেয়। এখন আমার ঘরও গেলো, আসবাপত্রও গেলো! আমি এর বিচার চাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইমান আলী জানান, ৬ নং ওয়ার্ডের সাতজনকে গুচ্ছগ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যাদের বের করে দেওয়া হয়েছে তারা খুবই গরিব, ভূমিহীন। অন্যের বাড়িতে রাত কাটান। একটি প্রভাবশালী মহল টাকা দাবি করে। টাকা দিতে পারেনি বলে অনেকের ঘর বাতিল হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, সঠিক তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হোক ও প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হোক।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাদের ঘর দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ৭০ ভাগ মানুষ বসবাস করেন না। এসিল্যান্ডের সহকারি এসে তালিকা করে তাদের ঘর বাতিল করেছেন। এসময় এসিল্যান্ড আমাদের ডেকে বলেন, ঘর খালী আছে এমন নামগুলো দেন। পরে আমি কুদরতকে বলি।
ভুমিহীনদের কাছে টাকা নিয়েছেন কি না-এমন প্রশ্ন করলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
ভুমিহীনদের নামে বরাদ্দকৃত ঘর গুলো বাতিল কেন করা হলো- জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান অভিযোগ অস্বীকার বলেন, কারো ঘর বাতিল করা হয়নি। যারা অভিযোগ করছেন তাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন।
জনি নামে এক যুবককে বিনা কারণে পুলিশ দিয়ে আটক করেছেন কেন- এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেতে কোন টাকা পয়সা লাগে না। কেউ যদি ঘর দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
news24bd.tv/desk