অবিবাহিত কিছু নারী কেন পরিবার থেকে আলাদা থাকতে চান

অবিবাহিত কিছু নারী কেন পরিবার থেকে আলাদা থাকতে চান

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা সাধারণত বিয়ের আগ পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গেই বসবাস করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে কিছু নারী একই শহরে বাস করলেও থাকছেন পরিবারের বাইরে।

কখনো বা কাজের প্রয়োজনে, আবাার কখনো তারা নিজেরাই পছন্দ করছেন এই আলাদা থাকাটাকে।

অবিবাহিত একটি মেয়ের পরিবার থেকে আলাদা থাকাটাকে তার ব্যক্তি স্বাধীনতার চর্চা বলেই মনে করছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা।

ব্যক্তি স্বাধীনতায় আঘাত লাগে না: ঢাকার মালিবাগে থাকেন আনোয়ারা আক্তার। পড়াশোনা শেষ করে তিনি মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন ২০১৩ সালে। খবর বিবিসির।

ঢাকার খিলখেতে তার পরিবারে বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই থাকেন।

কিন্তু ২০১৮ সালের দিকে তিনি আলাদা বাসা নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি বিয়ে করেন নি। এই অবস্থায় কেন তার এই একা থাকার চিন্তাটা এলো- জানতে চেয়েছিলাম আনোয়ারা আক্তারের কাছে।

‘আগে যখন অফিস শেষ হতো তখন ২০ মিনিটের মধ্যে বাসায় ঢুকতে হতো। এর চেয়ে বেশি সময় লাগলে বাসায় সবাই জিজ্ঞেস করতো। একটা বয়সের পর এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে আর ভালো লাগে!’ বলেন তিনি।

‘আমার তো ইচ্ছা করে অফিস শেষ করে বন্ধুদের সঙ্গে বসে চা খেতে বা আড্ডা দিতে বা ব্যক্তিগত কোন কাজ থাকলে সেটা সারতে। সেটা সম্ভব ছিল না। আমি যখন একা থাকা শুরু করলাম বুঝলাম যে আসল স্বাধীনতা কাকে বলে। আমি চরম আত্মতুষ্টি এবং আত্মনির্ভরশীল বোধ করলাম। ’

একই শহরে বাস করেও পরিবার থেকে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত আনোয়ারা আক্তারের পরিবার প্রথমে মেনে নেয় নি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা মেনে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা বলেছিলেন এমন কোন কাজ করবে না যাতে করে আমাদের পরিবারকে কথা শুনতে হয়। পরে তারা এসে দেখে গেছে আমি কোথায় থাকি। আমার নিরাপত্তা আছে কি না। আর আমার তো একটা বয়স হয়েছে। আমি জানি কোনটা করতে হবে আর কোনটা করা যাবে না। ’

প্রস্তুত করা যায় নিজেকে: ঢাকার বাইরেও মেয়েদের একা থাকার নজির রয়েছে।

জান্নাতুল ইসলাম তাদের একজন। কুষ্টিয়া শহরে তার বাড়ি।

বছর খানেক আগে তিনি পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।

তিনিও এখন পরিবারের বাইরে একাই থাকেন।

তিনি বলেন যে পরিবারের সঙ্গে থাকা এবং না থাকার সুবিধা-অসুবিধা বিশ্লেষণ করেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তার পরিবার সেটা প্রথম থেকেই সমর্থন করেছেন।

‘পরিবারের সঙ্গে থাকার একটা বড় দিক নিরাপদ বোধ করা। আর পরিবারের বাইরে বের হলে প্রকৃত জগতের মুখোমুখি হতে হয়। তখন সেখানকার সব সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা যায়। আর আমি সেটাই করেছি,’ বলেন তিনি।

কী বলছেন অভিভাবকরা: একা একটি মেয়ের বাড়ি ভাড়া নিতে গেলে সবার প্রথমে আসে তার নিরাপত্তার বিষয়।

এরপর অনেকেই অবিবাহিত মেয়েদেরকে বাড়ি ভাড়া দিতে চান না।

ঢাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলছেন তার মেয়ে যখন বাড়ির বাইরে থাকতে চাইলো তখন তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সবদিক বিবেচনা করে তিনি এখন আর আপত্তি করেন না।

‘অবশ্যই আপত্তি করেছি। কারণ একই শহরে থেকে আলাদা বাসায় থাকবে মেয়ে- এটা মানতে পারছিলাম না। পরে অনেক চিন্তা করে দেখলাম এটা দরকার আছে। মেয়েদের স্বাবলম্বী করার জন্য তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিজেকে সামলানোর একটা সুযোগ আমাদের অভিভাবকদের করে দেয়া উচিত। আর সঙ্গে তো আমরা আছিই’ বলেন তিনি।

ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবোধ চর্চা: সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন নগরায়ন এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবোধ চর্চা করতে চাইবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সানজিদা নিরা বলেন, "এটা যে নতুন কোন ধারণা তা না। আমরা সব সময় দেখে থাকি সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে এগুলো হয়ে আসছে। "

‘সুতরাং সেই ধারাবাহিকতায় যদি আমরা দেখি আমাদের দেশের মেয়েরা মোটামুটি পড়াশোনা শেষ করে বেশ কিছুদিন চাকরি-বাকরি করার পর, অর্থ উপার্জন শুরু করার পর তিনি যখন একটা অবস্থানে যান, তখন অবিবাহিত অবস্থাতেই একই শহরে আলাদা জায়গায় থাকতে চাইতে পারেন,’ বলেন তিনি।

সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন এই চলটা এখন পর্যন্ত শহরকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্তদের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে।

আর এটাকে সমাজের অন্যান্য পরিবর্তনের মতই একটা ধারা বলে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

news24bd.tv তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক