সাতক্ষীরায় বাজারে উঠতে শুরু করেছে আম

সাতক্ষীরায় বাজারে উঠতে শুরু করেছে আম

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

নানা প্রজাতির আমে ভরপুর হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার বড়বাজার। মধু মাস জ্যৈষ্ঠ আসার আগেই সাতক্ষীরার সুলতানপুরের বড়বাজারে উঠতে শুরু করেছে বিশ্বমুক্ত গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই সহ সুস্বাদু বিভিন্ন প্রজাতির দেশী আম।  

আবহাওয়ার আর মাটির গুনাগুণের কারণে দেশের অন্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরার আম আগে ভাগেই পাকে। জেলা প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আনুষ্ঠানিকতায় ৫ মে থেকে গাছ থেকে পরিপক্ব পাকা আম পাড়া শুরু হয়েছে।

 

এবছর সাতক্ষীরা বিশ্বমুক্ত সুস্বাদু ১০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হবে ইউরোপের বাজারে। এ জন্য সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর ও আশাশুনি এবং দেবহাটাসহ মোট ৫টি উপজেলার ৫০০ জন আম চাষিকে আগে থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আম উৎপাদন করা হয়েছে।  

আবহাওয়া ও পরিবেশ ঠিক থাকলে অচিরেই প্রতিবারের ন্যায় গোপালভোগ, হিমসাগর ও আমের রাজা ল্যাংড়া আম যাবে জার্মান, ফ্রান্স, ইতালি সহ ইংল্যান্ডের বাজারে।

এদিকে শহরের বড়বাজারে জেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের আম বাগান থেকে সকাল থেকে ভ্যানসহ বিভিন্ন পরিবহন যোগে আসতে শুরু করে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস, ক্ষিরসরাই, বৈশাখীসহ নানা জাতের আম।

ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বড় বড় আম ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা আম কিনতে এসেছেন বড় বাজারের বিভিন্ন আড়তে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা বড় বাজারের মার্কেটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় আর কেনা-বেচায় গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে বড়বাজার আমের আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি মন গোবিন্দভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ২১০০ থেকে ২৪০০ টাকা দরে। গোপালভোগ ও খিরসরাই আম বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৯০০ টাকা মন দরে। আর দেশি আম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা মন দরে।  

সাতক্ষীরা কাঁচা ও পাকামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহিম বাবু জানান, গত ২৭ মার্চ সরকারি কর্মকর্তা ও আম ব্যবসায়ীদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় জেলায় আম ভাঙার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সেখানে ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, ক্ষীরশরাই, গোলাপখাস ও বৈশাখীসহ অন্যান্য স্থানীয় জাতের আম গাছ থেকে পাড়ার সিদ্ধান্ত হয়।  

এছাড়া ১৬ মে হিমসাগর, ২৪ মে ল্যাংড়া ও ১ জুন থেকে আম্রপালি আম ভেঙে বাজারে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক আম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তিনি আরও জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের বাজার মূল্যও অনেক ভাল। ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আম ব্যবসায়ীরা আম কিনতে ভিড় করছে শহরের আমের সব চেয়ে বড় আড়ত বড় বাজারে। এছাড়া বিভিন্ন আম বাগান থেকে আম কিনে ট্রাক ভর্তি করে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে চলে যাচ্ছে।  

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। পরিসংখ্যানে ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চলতি বছর জেলায় আমের ফলন খুব কম হয়েছে। ৫০ ভাগ গাছে মুকুল আসেনি। আমগাছে যখন মুকুল আসবে, ঠিক তার আগ মুহূর্তে শিলা বৃষ্টি ও ঝড় হওয়ায় মুকুল ঝরে গেছে। পরবর্তীতে গাছে কচি সবুজ পাতা চলে আসে। সে কারণে আমচাষিরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  

তিনি আরও জানান, এ বছর সাতক্ষীরা থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, আম্রপালি, হিমসাগর ও ল্যাংড়া আমসহ মোট ১০০ মেট্রিক টন আম ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি হবে। ইসলাম গ্রুপ, আর আর এন্টারন্যাশনাল, বুল বুল ভূঁইয়া কর্পোরেশন, গ্লোব ফুড লিমিটেড কোম্পানিসহ বিভিন্ন বায়ার কোম্পানি পর্যায়ক্রমে জার্মান, ফ্রান্স, ইতালি, ইংল্যান্ড সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাজারজাত করবে।

news24bd.tv/কামরুল