টেকনাফে শিশু হত্যায় ৬ জনের ফাঁসির আদেশ

প্রতীকী ছবি

টেকনাফে শিশু হত্যায় ৬ জনের ফাঁসির আদেশ

অনলাইন ডেস্ক

কক্সবাজারের টেকনাফে সাত বছরের শিশু আলী উল্লাহ আলো হত্যা মামলায় ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১১ মে) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় দেন। এ সময় দুইজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।  
 
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলমন।

 

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. সুমন আলী (২৬), ইয়াছিন রায়হান (২৯), মো. ইয়াকুব (৩৪), মো. ইসহাক কালু (৩১) ও  নজরুল ইসলাম (২৮)।  দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে তিনজন পলাতক রয়েছেন।  

এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে  মহিবুল্লাহ (৪৫) ও মো. দিদার মিয়াকে।  

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদার বিল এলাকার রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও ফারজানা পারভীন সুইটির সাত বছরের শিশু মো. আলী উল্লাহ আলো।

২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে মোহাম্মদ আবদুল্লাহর কর্মচারী মো. সুমন আলী বাড়ির সামনের কাচারি ঘরে তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করার উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে যান। পরে কাচারি ঘরের সিলিংয়ের ওপর তুলে হাত-পা বেঁধে মুখে জোর করে কচটেপ লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সুমন আলী।  

এ সময় শিশুটি চিৎকার করলে সুমন আলী ও অন্য আসামিরা তাকে অপহরণ করার বিষয় বাড়ির লোকজন জেনে গেছে বলে মনে করেন। আলী উল্লাহ আলো জীবিত থাকলে ঘটনা ফাঁস হতে পারে আশঙ্কায় তাকে আসামিরা সিলিংয়ের ওপর জবাই করে হত্যা করেন।  

এ ঘটনায় নিহত আলী উল্লাহ আলোর বাবা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বাদী হয়ে ২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পাঁচ আসামির নাম উল্লেখ করে এবং ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে টেকনাফ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

এবং টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) স্বপন কুমার মজুমদার তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এ চার্জশিটের বিরুদ্ধে বাদী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর আদালতে নারাজি আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত বাদীর নারাজির আবেদন গ্রহণ করেন এবং ২০১৪ সালের ৪ মার্চ মামলাটি সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।  

আদালতের নির্দেশে পর্যায়ক্রমে সিআইডির চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু, সহকারী পুলিশ সুপার এস.এম সাহাব উদ্দিন আহমদ এবং সর্বশেষ সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্টো জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির সরকার তদন্ত করে গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এজাহারভুক্ত  ৫ জনসহ ৮ জন আাসামির নাম উল্লেখ করে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন।  

মামলাটি টেকনাফের আমলি আদালত থেকে বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়। মামলার তিনজন আসামি যথাক্রমে সুমন আলী, ইয়াছিন রায়হান ও মো. ইয়াকুব ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।  

২০২০ সালের ২৪ জুলাই কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলাটির চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন। মামলায় ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তাদেরকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন।  

এরপর আলামত প্রদর্শন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যাচাই, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন যাচাই, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্কসহ সকল বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বুধবার মামলার রায় দেওয়া হয়। ঘটনার ১০ বছর ৮ মাস ৪ দিন পর চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির রায় দেওয়া হলো।  

news24bd.tv/কামরুল