যে কারণে সম্পদে স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন

প্রতীকী ছবি

 যে কারণে সম্পদে স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন

কাসেম শরীফ

মুসলমানরা পরকালে বিশ্বাস করে। তার অর্থ এই নয় যে দুনিয়ায় সম্পদশালী হওয়া নিষিদ্ধ। বরং একজন মুসলমানের জন্য দুনিয়ার কল্যাণ এবং আখিরাতের কল্যাণ—দুটিই প্রয়োজন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহর শেখানো দোয়া—হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিন।

’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০১)

দুনিয়াবি কল্যাণের জন্য সম্পদে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার তাগিদ আছে। তাই সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে কৃপণ হওয়া যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি প্রাচুর্যের সময় অপচয়-অপব্যয় করে সম্পদ খরচ করাও নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে অপচয় ত্যাগের কঠোর নির্দেশ জারি করে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আহার এবং পান করো, আর অপচয় কোরো না; আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩২)

মহান আল্লাহ আত্মনির্ভরশীল মানুষকে ভালোবাসেন।

সাদ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে মহান আল্লাহ মুত্তাকি, আত্মনির্ভরশীল ও লোকালয় থেকে নির্জনে বাসকারী বান্দাকে ভালোবাসেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩২২)

সন্তানের জন্য কিছু সম্পদ রেখে মৃত্যুবরণ করা উত্তম। সাদ ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, বিদায় হজের বছর আমি ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি হই, তখন রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার রোগ কী পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। আমি একজন সম্পদশালী। আমার ওয়ারিশ হচ্ছে একটিমাত্র কন্যা। আমি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ আল্লাহর রাস্তায় সদকা করে দেব? তিনি বলেন, না। আমি বললাম, তবে কি অর্ধেক? তিনি বলেন, হে সাদ, এক-তৃতীয়াংশ দান করো। এবং এক-তৃতীয়াংশই অনেক বেশি। তুমি তোমার সন্তানকে সম্পদশালী রেখে যাওয়া উত্তম—এমন অবস্থার চেয়ে যে তুমি তাদের নিঃস্ব রেখে গেলে, ফলে তারা অন্যের কাছে ভিক্ষা করে। (বুখারি, হাদিস : ৩৯৩৬)

আর্থিক সচ্ছলতা প্রত্যাশা করা, এর জন্য প্রচেষ্টা চালানো এবং দোয়া করা উচিত। আবদুল্লাহ (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এই দোয়া করতেন—‘আল্লা-হুম্মা ইন্নি আস্আলুকাল্ হুদা ওয়াৎ তুকা ওয়াল আফা-ফা ওয়াল গিনা’। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে পথনির্দেশ, আল্লাহভীতি, চারিত্রিক উৎকর্ষ ও সচ্ছলতার জন্য দোয়া করছি। (মুসলিম,   হাদিস : ৬৭৯৭)

সম্পদে স্বাবলম্বী হলে অন্যের হক আদায় করা যায়। পরিবারের ব্যয়ভার বহন করা যায়। দান-সদকা, জাকাত, হজ, মসজিদ নির্মাণ ইত্যাদি আর্থিক ইবাদত পালন করা যায়। যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বাঁচতে চায় এবং এর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে, মহান আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে দেন। হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ওপরের হাত (দাতার হাত) নিচের হাত (গ্রহীতার হাত) থেকে উত্তম। প্রথমে তাদের দেবে যাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব তুমি বহন করো। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সদকা করা উত্তম। যে ব্যক্তি (পাপ ও ভিক্ষা করা থেকে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে দেন। (বুখারি, হাদিস : ১৪২৭)

মহান আল্লাহ আমাদের সম্পদে স্বাবলম্বী করুন।