কর্নেল অলির এলডিপি থেকে ২১৫ নেতার পদত্যাগ

সংগৃহীত ছবি

কর্নেল অলির এলডিপি থেকে ২১৫ নেতার পদত্যাগ

অনলাইন ডেস্ক

কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবু জাফর সিদ্দিকীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ২১৫ জন নেতা একযোগে পদত্যাগ করেছেন।  

এ ছাড়া এলডিপির যুববিষয়ক অঙ্গসংগঠন গণতান্ত্রিক যুব দল, ধর্মবিষয়ক সংগঠন গণতান্ত্রিক ওলামা দল ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পুরো কমিটির নেতারাও পদত্যাগ করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণপদত্যাগের এই তথ্য জানানো হয়। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদত্যাগকারীদের মধ্যে এলডিপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদের ১৭ জন রয়েছেন।

 

তাঁদের মধ্যে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফরিদ আমিন, যুগ্ম মহাসচিব তমিজ উদ্দিন (টিটু), সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মো. ইব্রাহিম রওনক, প্রচার সম্পাদক আফজাল হোসেন, যুববিষয়ক সম্পাদক শফিউল বারী, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক লস্কর হারুনুর রশিদ, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন মণ্ডল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান উল্লেখযোগ্য।

এলডিপির যুববিষয়ক সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব দলের ১০১ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক ছাড়া সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্যসচিব মোহাম্মদ ফয়সালসহ ১০০ জনই পদত্যাগ করেছেন। সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক ওলামা দলের ২৫ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা বদরুদ্দোজা ও সদস্যসচিব আবদুল হাইসহ ২৩ জন পদত্যাগ করেছেন। একই সঙ্গে ৭৫ সদস্যের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এ এস এম মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হকসহ কমিটির সব সদস্য পদত্যাগ করেছেন।

সদ্য পদত্যাগ করা এলডিপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবু জাফর সিদ্দিকী জানান, ‘এলডিপিতে গণতন্ত্রচর্চার কোনো সুযোগ নেই। সব সিদ্ধান্ত তিনি (অলি আহমদ) একাই নেন। তা ছাড়া এলডিপি ২০–দলীয় জোটে থাকলেও দলের রাজনৈতিক চিন্তা স্পষ্ট নয়। অলি আহমদ এলডিপিকে একটি রহস্যজনক রাজনৈতিক দল হিসেবে ব্যবহার করছেন। এসব অনেক কথাবার্তা হলেও তিনি কাউকে পাত্তা দেন না। ফলে বাধ্য হয়েই আমরা পদত্যাগ করেছি। ’

পদত্যাগকারী নেতাদের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রপন্থী মানুষেরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কার্যকর গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার সংগ্রামে সক্রিয়। তখনো অলি আহমদ তাঁর নেতৃত্বের পুরো ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এলডিপিকে একটি ‘রহস্যজনক’ রাজনৈতিক দল হিসেবে ব্যবহার করছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোটের শরিক হয়ে ১০ বছর ধরে জোটবিরোধী কার্যক্রম করেছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও একটি বিশেষ দলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা দেখা গেছে চরম মাত্রায়—যা এলডিপির রাজনৈতিক আদর্শ ও লক্ষ্যকে দলিত-মথিত করেছে এবং দলকে রাজনৈতিক অঙ্গনে হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমাদের আরও দুঃখিত করে, যখন দেখি এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ পুলিশের মিথ্যা মামলায় কারাগারে, তখন অলি আহমদ প্রমোদ ভ্রমণে। একটি দলের সভাপতি হিসেবে এর চেয়ে ‘আত্ম অহমিকা’ আর কী হতে পারে? ফলে আমরা গণপদত্যাগ করছি। ’

বিএনপির সাবেক নেতা অলি আহমদ ২০০৬ সালে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠন করেন। তিনি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।

এদিকে অলি আহমদের পক্ষের নেতা এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন রাজ্জাক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘দুষ্কৃতকারীরা দল ছাড়ায় এলডিপি পূতপবিত্র হয়েছে। অলি আহমদ ও রেদোয়ান আহমেদ হচ্ছেন দলের ফোকাস। এর বাইরে কে গেল, কে এল তা বিবেচ্য না। ’

সদ্য পদত্যাগকারী এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব তমিজউদ্দিন জানান, ‘তাহলে কি এত দিন এলডিপি, অলি আহমদ অপবিত্র ছিলেন?’

এলডিপিতে যখন গণপদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে, তখন দলের সভাপতি অলি আহমদ দেশে নেই। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তিনি এখন সিঙ্গাপুরে আছেন।

যোগাযোগ করলে অলি আহমদ আজ সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে মুঠোফোনে গণম্যাধমকে বলেন, ‘এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন রাজ্জাক যে বিবৃতি দিয়েছেন, এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই। ’