'আমার মণিকে তোমরা মাফ করে দাও, ভিক্ষা দাও'

ফাইল ছবি

'আমার মণিকে তোমরা মাফ করে দাও, ভিক্ষা দাও'

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

শাহবাগের একটি খাবারের দোকানে বসা সালেহা বেগম। চোখের দুই পাতা ভেজা। সাংবাদিক দেখতেই হাত জোড় করে বললেন, ‘আমার মণিকে তোমরা মাফ করে দাও। ভিক্ষা দাও।

আমার মণিকে আমি ঢাকায় আর রাখব না গো। গ্রামে নিয়ে চলে যাব। শুধু মুক্তি দাও। সেও বাঁচুক।
আমিও বাঁচি। ’

ছেলের মুক্তির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদ খানের মা সালেহা খাতুন। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয় থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়ে নেওয়া হয় রাশেদকে। আগে থেকেই ডিবি অফিসের ফটকে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাশেদের মা। ছেলের জন্য ঝিনাইদহ থেকে ছুটে এসেছেন। নিজের সবটুকু দিয়ে ছেলেকে মানুষ করেছেন। একদিন ছেলেটি সংসারের দায়িত্ব বুঝে নেবে, সংসারের সকল অভাব দূর হবে, মুছে যাবে মায়ের সারা জীবনের কষ্ট- এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন সালেহা বেগম। কিন্তু, সেই আশায় হঠাৎ করেই চিড় ধরেছে। তিন-তিনটি মামলার আসামি এখন রাশেদ। তিনি কি মুক্তি পাবেন? কখনো কি তাঁর কায়ক্লেশে চলা সংসারের দায়িত্ব বুঝে নেবেন? কূলকিনারা পান না সালেহা বেগম। সন্তান সংসারের দায়িত্ব নিয়ে তার সব কষ্ট দূর করবে এমন চাওয়া এখন আর নেই সালেহা বেগমের মনে, শুধু চান, ছেলেটি ফিরে আসুক।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে তৈরি ছাত্রদের মঞ্চ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান। রাশেদের দুটি বোন। অভাবের সংসার। রাজমিস্ত্রি বাবার সামান্য রোজগারে চলে সংসার, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। দু'জনের সবটুকু নিংড়ানো ভালোবাসা আর শ্রম দিয়ে মানুষ করার চেষ্টা করছেন সন্তানদের। কিন্তু, হঠাৎ এমন বিপদ এসে ঘিরে ধরবে তা ঘুনাক্ষরেও বুঝে উঠতে পারেননি তারা।

.............................................................................
আরও পড়ুন:  ইংল্যান্ড না ক্রোয়েশিয়া কে যাবে ফাইনালে ! দেখা যাক উট কি বললো?

.............................................................................

সন্তানকে কত কষ্ট করে মানুষ করার চেষ্টা করছেন তারা দু'জন তা বলতে গিয়ে অঝোরে কেঁদে ফেলেন সালেহা বেগম। তিনি বলেন, ঘরে নিয়মিত খাবার থাকে না। এমন অনেক দিন আছে, রাশেদের বাবা চাল কিনে এনেছেন, এমন সময় রাশেদ ফোন করে জানিয়েছে তার বইখাতা কিনতে টাকা লাগবে, তখনই বাজারে গিয়ে চাল ফেরত দিয়ে ছেলেকে টাকা পাঠিয়েছেন। ছেলে পঞ্চম, অষ্টম, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে সরকারি ও ব্যাংকের বৃত্তির টাকা পেয়েছে। বাকিটা তাঁরা জুগিয়েছেন। অনেক রাত শুধু পানি খেয়েই পার হয়েছে। রাশেদের এমবিএ ভর্তির সময় ছাগল বিক্রি করেছি। স্বপ্ন ছিল- এমন কষ্টের দিন আর থাকবে না। এই তো আর কটা দিন। কিন্তু, সেটা আর হলো কোথায়? এখন রাশেদের বাবার কিডনির অপারেশনের জন্য জমানো টাকা খরচ করে ছেলের জন্য ছোটাছুটি করছেন।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল)

সম্পর্কিত খবর