নর্থ সাউথের টাকা আত্মসাত : চার আসামির জামিন আবেদন শুনানি আজ

সংগৃহীত ছবি

নর্থ সাউথের টাকা আত্মসাত : চার আসামির জামিন আবেদন শুনানি আজ

অনলাইন ডেস্ক

দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ক্রয়ের নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ চার জনের হাইকোর্টে জামিন আবেদন শুনানি আজ।

বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজহারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হবে।

যে চারজন জামিন নিতে আবেদন করেছেন তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মোহাম্মদ শাহজাহান, এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ ও রেহানা রহমান।

উল্লেখ্য, প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ৫ মে  বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এই ছয়জন হচ্ছেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম.এ. কাশেম, বেনজীর আহমেদ, মিসেস রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আশালয় হাউজিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মোঃ হিলালী। মামলার চার্জশিটভুক্ত এই ছয় জনই ওয়ারেন্টযুক্ত আসামি।

ওয়ারেন্টযুক্ত এই আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল মানববন্ধন করে আইন ও মানবধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন।  

মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, অভিযুক্ত প্রত্যেকেই সমাজের প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তি।

সেকারণেই তাদের গ্রেফতারে এমন গড়িমসি চলছে। কিন্তু এদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় না আনলে এই সিন্ডিকেটের কবল থেকে নর্থ সাউথের মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।

মানববন্ধনে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এর উপদেষ্ঠা ড. সুফী সাগর সামস বলেন, মূলত আজিম-কাসেম সিন্ডিকেটের কারণেই নর্থ সাউথ পরিণত হয়েছে দুর্নীতি-অনিয়ম ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে। তাই এদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু অভিযুক্তদের ঠিক কী কারণে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। অভিযুক্ত প্রত্যেকেই সমাজের প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাশালী। তারা যেন বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেজন্য তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান। ’

ড. সুফী সাগর সামস আরো বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ট্রাস্টি আজিজ আল কায়সার টিটোও এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তার বাবা এমএ হাসেম নর্থ সাউথে থাকাকালেই এই সিন্ডিকেটের অংশ ছিলেন। টিটোও এর বাইরে নন। কিন্তু কী এক অজ্ঞাত কারণে আজিজ আল কায়সার টিটোকে মামলা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। আজিজ আল কায়সার টিটোর মতো আরো যারা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আজিজ আল কায়সার টিটোর সিঙ্গাপুরে বিপুল পরিমাণ অর্থের হিসাব নেয়ার জন্য তিনি জোড়ালো আবেদন জানান।

গত ৫ মে দুদকের সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপ পরিচালক ফরিদ উদ্দিন পাটোয়ারী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়- বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অনুযায়ী উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সরকারের সুপারিশ/অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কতিপয় সদস্যের অনুমোদন/সম্মতির মাধ্যমে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্ট এর নামে ৯০৯৬.৮৮ ডেসিমেল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩,৮২,১৩,৪৯৭/- (তিনশত তিন কোটি বিরাশি লক্ষ তের হাজার চারশত সাতানব্বই) টাকা অতিরিক্ত অর্থ অপরাধজনকভাবে প্রদান/ গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্তেও বেশী দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন, পরবর্তীতে বিক্রেতার নিকট থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন এবং পরবর্তীতে আবার নিজেরা উক্ত এফডিআর'র অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। এ ধরনের বেআইনী কার্যকলাপ সংঘটিত করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারী অর্থ আত্মসাত করে নিজেরা অন্যায়ভাবে লাভবান হয়েছেন এবং উক্ত বেআইনি কার্যক্রম করার ক্ষেত্রে প্রতারণা ও জালজালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণপূর্বক কমিশন বা ঘুষের আদান প্রদান করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বিধায় আজিম উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারম্যা,  বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়,  এম.এ. কাশেম, সদস্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, বেনজীর আহমেদ, সদস্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ,  রেহানা রহমান, সদস্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, মোহাম্মদ শাহজাহান, সদস্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, আমিন মোঃ হিলালী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আশালয় হাউজিং এন্ড ডেভেলপার্স লি:, উল্লিখিত ০৬ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ক ধারা এবং ১৯৪৭ সনের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এর মামলা নং-০১ তারিখ: ০৫/০৫/২০২২ খ্রি করা হয়।

news24bd.tv/রিমু