পরীক্ষায় পাস করানোর নিশ্চয়তা দিতেন তারা

প্রতীকী ছবি

পরীক্ষায় পাস করানোর নিশ্চয়তা দিতেন তারা

মাসুদা লাবনী

হিডেন স্পাই ওয়্যারলেস কিট ব্যবহার করে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করানোর নিশ্চয়তা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া, একটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা ইকবাল ও তার অন্যতম ৩ সহযোগীকে রাজধানী ও আশেপাশের এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ডিভাইস ও প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামতও জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

 

তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি, সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সুকৌশলে ফাঁস করে। তারা হিডেন স্পাই ওয়্যারলেস কিট ব্যবহার করে সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের নিশ্চয়তা দিয়ে চাকুরি প্রার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

র‍্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে জানায় যে, প্রথমে তারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে ঐ নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার স্থান ও পরীক্ষার গার্ড সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে।

এসময় চক্রের অন্যান্য সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি চাকুরি প্রত্যাশিদের খুঁজে বের করে ১০-১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাশ ও চাকুরি পাইয়ে দেয়ার নিশ্চয়তার মাধ্যমে তাদেরকে প্রলোভন দেখাত। পরবর্তীতে আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের কাছে উদ্ধারকৃত ডিজিটাল ডিভাইসগুলো প্রদান করে এর ব্যবহার বিধি প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রাথমিকভাবে ১/২ দুই লক্ষ টাকা জামানত হিসেবে গ্রহণ করত। অবশিষ্ট টাকা চাকুরি পাওয়ার পরে পরিশোধ করবে মর্মে চুক্তি করত।

এভাবে তারা বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন চাকুরি প্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে পরীক্ষার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের নিকট পাঠাত। প্রতারক চক্রটি প্রশ্নপত্রের উত্তর দেয়ার জন্য পূর্ব থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি টিম প্রস্তুত রাখত। অতঃপর এই চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার হল থেকে পাঠানো প্রশ্নপত্রের উত্তরসমূহ মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত টিম এর মাধ্যমে খুঁজে বের করে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের বলে দিত।  

প্রতারক চক্রটির মূলহোতা গ্রেফতারকৃত মোঃ ইকবাল হোসেন ২০০৮ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। সে নিজ এলাকায় শিক্ষকতা করার সময় ২০১৫ সালে একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী আলতাফ হোসেন নামক এক ব্যক্তির সাথে পরিচয়ের সূত্রে তার কাছ থেকে সরকারি-বেসরকারী বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উর্ত্তীণের নিশ্চয়তা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি রপ্ত করে। পরবর্তীতে করোনা মহামারির সময় আলতাফ হোসেন মারা গেলে গ্রেফতারকৃত ইকবাল হোসেন এই প্রতারক চক্রটি পরিচালনা করা শুরু করে। তার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা ও বেশ কয়েকটি সাধরণ ডায়েরী রয়েছে।  

গ্রেফতারকৃত রমিজ এই প্রতারক চক্রের অন্যতম সহযোগী এবং একটি হত্যা মামলার পলাতক আসামি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে থাকাকালীন ২০২০ সালে ইকবালের তার সাথে পরিচয় হয়। সে সময় রমিজ তার আর্থিক সংকটের কথা ইকবালকে খুলে বলে এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা আছে বলে জানায়। পরবর্তীতে ইকবাল তাকে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় সহযোগিতা করার কথা বলে তাকে এই প্রতারক চক্রের সদস্য করে নেয়। ইকবাল এর ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে জ্ঞান কম থাকায় সে রমিজকে দিয়ে এই কাজ সম্পাদন করাত।

গ্রেফতারকৃত রমিজ আরও জানায় যে, যখন কোন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা হতো তারা তখন পরিক্ষার্থীদেরকে তাদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে পরস্পর সংযুক্ত হয়ে বাহিরে অবস্থান করত এবং রমিজের পরিচিত কিছু মেধাবী ছাত্রের মাধ্যমে দ্রততার সাথে উত্তরপত্র তৈরী করে পরীক্ষার হলে ঐসব ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে জানিয়ে দিত।

গ্রেফতারকৃত নজরুল ১৯৯৪ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরে অফিস সহকারি-কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকুরীতে যোগদান করে। নজরুল এবং রমিজের বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় তারা একে অপরের পূর্বপরিচিত ছিল।

news24bd.tv/রিমু