নর্থ সাউথের ৪ ট্রাস্টির জামিন আবেদনের শুনানি পেছালো

সংগৃহীত ছবি

নর্থ সাউথের ৪ ট্রাস্টির জামিন আবেদনের শুনানি পেছালো

অনলাইন ডেস্ক

দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ক্রয়ের নামে টাকা আত্মসাতের  অভিযোগের মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ট্রাস্টির আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি ফের পিছিয়েছে। শুনানির লিখিত সারসংক্ষেপ জমা দিতে প্রস্তুতির জন্য আবেদনকারী পক্ষ সময় চাইলে আদালত আগামী রোববার (২২ মে) দুপুর ২টা পর্যন্ত শুনানি পিছিয়ে দেন।   

আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। জামিন আবেদনকারী আসামিরা ওইদিন আদালতে হাজির হবেন এমন অঙ্গীকারের পর এ আদেশ দেওয়া হয়।

আদেশে আদালত বলেন, শুনানি আগামী রোববার ২টা পর্যন্ত মুলতবি করা হলো। শুনানির আগে জামিন আবেদনকারীদের আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

আদালতে জামিন আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আইনজীবী মিজান সাঈদ। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরমীদ আলম খান।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

প্রসঙ্গত, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত ৫ মে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।

আসামিরা হলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান এবং আশালয় হাউজিং ও ডেভেলপারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।

তাঁদের মধ্যে রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন, যা গত বুধবার শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে আসামি রেহানা রহমান ও এম এ কাশেমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, মোহাম্মদ শাহজাহানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল। আর বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ।  

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মো. খুরশীদ আলম খান।

জামিন শুনানিতে আসামিদের আইনজীবীদের ভাষ্য, অনুমানের ভিত্তিতে জামিন আবেদনকারীদের (আসামিদের) বিরুদ্ধে এ মামলা করেছে দুদক। তাঁদের কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে অর্থ আত্মসাতের স্পষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তা ছাড়া এ বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি দেওয়ানি মামলায় রায় হয়েছে। সেই রায়েই বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে। সেই রায়ে উল্লেখ করা মূল্যমান ধরেই জমি কেনা হয়েছে।

তাঁরা আরো বলেন, জামিন আবেদনকারী প্রত্যেকেই সামাজিক উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। হয়রানির আশঙ্কা থেকে উচ্চ আদালতে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন।

আবেদনকারী পক্ষের শুনানির জবাবে প্রথমে শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, ‘অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন অনুসারে অর্থপাচারের চেষ্টা করাও অপরাধ। সুতরাং অনুমানের ভিত্তিতে মামলা হওয়াটাই যৌক্তিক। দুদকের নিজস্ব অনুসন্ধানের পরেই এ মামলা হয়েছে। এখন তদন্তে আরো বেশি অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলতে পারে। তা ছাড়া জামিন আবেদনকারী আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন। তাঁরা একটি চক্র তৈরি করে এ অপরাধ সংঘটিত করেছেন। এ মামলায় প্রত্যেক আসামির  অপরাধকে বিচ্ছিন্ন বা ব্যক্তিগতভাবে দেখার সুযোগ নেই। ’

আসামিদের সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করে জামিন না দেওয়ার আরজি জানিয়ে এ আইনজীবী আরো বলেন, এ দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক সেনাপ্রধান, প্রধান বিচারপতির বিচার হয়েছে। সামাজিক মর্যাদায় জামিন আবেদনকারী এই আসামিরা কি আইনের ঊর্ধ্বে?

‘হয়রানির আশঙ্কা’ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আসামিপক্ষ এখানে পুলিশি হয়রানির কথা বলেছেন। দুদকের মামলায় তাঁরা পুলিশ পেল কোথায়? দুদকের মামলায় পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট বলতে কিছু নেই। দুদকের যে কর্মকর্তা মামলা করেছেন, তিনি কি আসামিদের বাসায় অভিযান চালিয়েছেন কখনো? কখনো হুমকি দিয়েছেন? করেননি। তাহলে হয়রানির আশঙ্কা কেন করছেন?’

আগাম জামিনসংক্রান্ত আপিল বিভাগের নীতিমালা (গাইডলাইন) উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগের গাইডলাইন অনুসারে তাঁদের আগাম জামিনের আবেদনটিই গ্রহণযোগ্য (মেইনটেনেবল) না। তাই তাঁদের আবেদনগুলো সরাসরি খারিজ করে হেফাজতে (কাস্টডিতে) পাঠানো হোক। ’ এর পক্ষে খুরশীদ আলম খান ১৭৬ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশনের মালিক মো. এরশাদ আলীকে হেফাজতে পাঠানোর উদাহরণ টানেন। গত মঙ্গলবার এই আদালতেই এরশাদ আলী আগাম জামিন নিতে এসেছিলেন।

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে বলেন, ‘কোনো আসামি যদি আর্থিক অপরাধে জড়িত থাকেন কিংবা জড়িত থাকতে পারেন বলে মনে হয়, সেই আসামির জামিন বিবেচনা করার আগে আসামির আর্থিক অপরাধ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। আপিল বিভাগ আর্থিক অপরাধকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলেছেন। তাই আবেদনকারী এই চার আসামির আগাম জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে হেফাজতে (কাস্টডিতে) পাঠানো উচিত বলে আমি মনে করি। এটাই আমার আরজি। ’

news24bd.tv/রিমু