নওগাঁয় রথযাত্রা উৎসব হওয়া নিয়ে সংশয়

নওগাঁয় রথযাত্রা উৎসব স্থান।

নওগাঁয় রথযাত্রা উৎসব হওয়া নিয়ে সংশয়

নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁ শহরের কালিতলা শ্রী শ্রী বুড়াকালিমাতা পূজা মন্ডপের মাঠ দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। ব্যবসায়ীরা মাঠ দখল করে সেখানে কারখানা ও কাঠের গুল ফেলে রাখায় এ বছর রথযাত্রা উৎসব হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

আগামীকাল শনিবার থেকে রথযাত্রা উৎসব শুরু হওয়ার কথা। আট দিনব্যাপী এই উৎসব চলে।

উৎসব উপলক্ষে সেখানে গ্রামীণ মেলা বসে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে রথাযাত্রা উৎসব দেখতে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ সেখানে আসেন।

কালিতলা মন্দির কমিটির সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় শত বছর ধরে শহরের কালিতলা এলাকায় ৬৫ শতক জায়গায় কালিতলা মন্দির কমিটির আয়োজনে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়ে আসছে। ওই জমি দুবলহাটি জমিদার হরনাথ কালিতলা মন্দিরের নামে দেবোত্তর সম্পতি হিসেবে দান করেন।

১৯২০ সালের সিএস ও ১৯৭২ সালের এসএ রেকর্ডে জমিটি মন্দিরের নামে থাকলেও ১৯৭২ সালের আরএস রেকর্ডে জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত দেখানো হয়। পরে বিষয়টি জানতে পেরে মন্দির কমিটি ওই জমির প্রকৃত মালিকানা নির্ধারণ ও জমির ওপর চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা করে। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে আদালত ওই জমির ওপর চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন। এক সময় ওই জায়গা নওগাঁ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মন্দির কমিটির কাছ থেকে ইজারা নিয়ে সেখানে গরুর হাট বসায়। কিন্তু ২০০৮ সালের পৌরসভা আর ওই স্থানটি ইজারা নেয়নি এবং সেখান থেকে গরুর হাট সরিয়ে শহরের বরুনকান্দি এলাকায় বসতে শুরু করে। সম্প্রতি স্থানীয় কিছু কাঠ ব্যবসায়ী ওই স্থানটি দখল করে সেখানে সেখানে ‘স’ মিল (কাঠ কাটার কারখানা) স্থাপন করে। মন্দির কমিটির লোকজন বাঁধা দিতে গেলে তাঁরা ওই জায়গা পৌরসভার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছে বলে জানায়। চলতি বছর রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে মাঠটি ফাঁকা করে দিতে মন্দির কমিটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া রথযাত্রা হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে।

শ্রীশ্রী বুড়াকালিমাতা সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন জানান, ওই জায়গা নিয়ে সরকারের সঙ্গে মন্দির কমিটির মামলা চলছে। আদালত মন্দির কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন। শতাধিক বছরের অধিক সময় ধরে ওই জায়গা মন্দির কমিটি ভোগদখল করছে। আগের পৌর কর্তৃপক্ষ মন্দিরের কাছ থেকে ওই জমি ইজারা নিয়ে গরুর হাট বসাত। তখন মন্দিরের প্রয়োজনে মাঠ ফাঁকা করতে বললে পৌর কর্তৃপক্ষ মাঠটি ফাঁকা করে দিত। কিন্তু গত ১০-১২ বছর ধরে ওই মাঠ ইজারা দেওয়া নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মন্দির কমিটির আর কোনো চুক্তি করেনি। ফলে কোনো বিঘ্ন বিরোধ ছাড়াই এতদিন সেখানে রথাযাত্রা উৎসব পালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু এ বছর কিছু কাঠ ব্যবসায়ী ওই জায়গা দখল ছেড়ে না দেওয়ায় আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া রথযাত্রা উৎসব পালন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রুবেল হোসেন বলেন, আমরা এত দিন জানতাম এই জায়গা পৌরসভার। আগে পৌরসভা আমাদের কাছে থেকে এখানে ব্যবসা করার জন্য ভাড়াও নিত। কিন্তু এক বছর থেকে পৌর কর্তৃপক্ষ ভাড়াও নিচ্ছে না। এখন হুট করে মন্দিরের লোকজন আমাদের এখান থেকে সরে যেতে বলছে। এখন আমরা কোথায় যাব? তবে পৌরসভা আমাদের এখান থেকে উঠে যেতে বললে আমরা চলে যাব।

নওগাঁ পৌরসভার প্যানেল মেয়র হাসান ইমাম তমাল বলেন, ওই জায়গাতো পৌরসভার নয়। পৌরসভা কখনোই ওই জায়গা কাউকে ভাড়া দেয়নি। তাহলে পৌর কর্তৃপক্ষ কীভাবে কাঠ ব্যবসায়ীদের উঠে যেতে বলবে। এটা মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাঠ ব্যবসায়ীদের বিরোধ। তারপরেও বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক মজনুকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/বাবুল/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর