ভেষজ বাগান, যুবকের কর্মসংস্থান

ভেষজ বাগান, যুবকের কর্মসংস্থান

জোবায়ের নোবেল

প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের আশেপাশে থাকা অনেক গাছপালা, উদ্ভিদ বা তরুলতা নানা ঔষধি কাজে মানুষজন ব্যবহার করে আসছে। বিশেষ করে আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি ওষুধের ক্ষেত্রে এসব গাছ-গাছড়ার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীজুড়ে ৫০ হাজারের ওপর এমন গাছ ও উদ্ভিদ রয়েছে, যা মানুষ নানা কাজে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশেও এরকম প্রায় ১ হাজার ৫০০ প্রজাতির তথ্য রয়েছে।

এর মধ্যে অন্তত ৮০০ প্রজাতির গাছ ও উদ্ভিদের ঔষধি ক্ষমতা রয়েছে। এর অনেক গাছই আমাদের ঘরের আশপাশে অযত্নে, অবহেলায় বড় হয়ে ওঠে। আবার সংরক্ষণের অভাবে অনেক গাছ ও উদ্ভিদ এখন হারিয়ে যেতেও বসেছে।

ঝুঁকি ছাড়া অল্প পুঁজিতেই অধিক লাভজনক ব্যবসা এটি।

অন্য কাজের পাশাপাশি এটি সহজেই করা যায় এবং বাড়িতে বসেই করতে পারেন। বর্তমনে ঔষধি গাছের বাণিজ্যিক চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। বাড়িতে ছাদের টবে ও বাগানে ঘৃতকমল, তুলসী, বাসকসহ বিভিন্ন ঔষধি গাছ লাগাতে পারেন। এক মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এসব গাছই হবে আপনার আয়ের উৎস। আর্থিক বিশ্লেষণে ভেষজ উদ্ভিদের চাষ অন্য যেকোনো কৃষির চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক। দেশ-বিদেশে ভেষজ উদ্ভিদের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে কৃষকদের পকেট ভরবে অনায়াসে। ভেষজ উদ্ভিদ চাষ অপেক্ষাকৃত কম শ্রমসাধ্য। ভেষজ উদ্ভিদে খুব বেশি পরিচর্যা প্রয়োজন হয় না।

অধিকাংশ ভেষজ উদ্ভিদ চাষে কৃত্রিম কীটনাশক ও সার প্রয়োজন হয় না। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এই চাষ করা যায়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গজিয়ে উঠেছে হারবাল কোম্পানি। যাদের একমাত্র চাহিদা ভেষজ কাঁচামাল যার সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কম। তাই এই ব্যবসা আপনার মুনাফা বাড়াতে অনেকটাই সক্ষম।

চাহিদা অনুযায়ী কিছু ঔষধি গাছ বেঁছে নিতে হবে। ঘৃতকমল, উলটকম্বল, পদ্মগুরুস, তুলসী ও বাসকের চাষ অল্প জায়গায়ই করা সম্ভব। উৎপাদনও হয় অল্প সময়ে। এসব গাছের ফলন বিক্রি করা যায় লাগানোর এক মাসের মাথায়। আর তুলসী, পাথরচুনা, পাথরকুচি, জিনসেং, অশ্বগন্ধা, বাসক, চিরতার গাছ বিক্রি হয়। এদের চাষও খুব সহজ। তবে শিমুলের মূল, বেল, আমলকী, হরীতকী, বয়রার মতো ঔষধি গাছের ফলন পেতে বেশ সময় লাগে। তাই দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা থাকলে এগুলো রোপণ করা যেতে পারে।

গাজীপুরের কাপাসিয়ার চেওরাইটে অধ্যাপক সুধন দাস ব্যক্তিগত উদ্যোগে শখের বসে গড়ে তুলেছেন বিশাল ঔষধী বাগান। সাবেক এটর্নী জেনারেলের ব্যক্তিগত চিকিৎসক আদি নাথ দাসওরফে সুপরিচিত আদি কবিরাজ ছিলেন তার পিতা। জন্ম থেকেই তার ভালোবাসা ঔষধী বৃক্ষের প্রতি। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন চিকিৎসা সাস্ত্রেকেই। তিনি জামালপুর বকশীগঞ্জের কে বি আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক। সপ্তাহে ২দিন করেন শিক্ষকতা আর বাকীটা সময় তিনি কাটান তাঁর ঔষধি বাগানে। সারা পৃথিবী ঘুরে তিনি সংগ্রহ করেছেন বহু ধরণের দুস্প্রাপ্য ঔষধি বৃক্ষ।

তাঁর অধ্যাপনা, রাজনৈতিক জীবন সবকিছু ছাপিয়ে তিনি নিজেকে পরিচিত করেছেন একজন বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে। তাঁর সংগৃহীত দেশি-বিদেশি দুস্প্রাপ্য ঔষধি বৃক্ষের বীজ, চারা, কলম নিতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন অনেক চিকিৎসক, অনেক বৃক্ষপ্রেমীরা। তিনি সবাইকে সাহায্য করেন তাঁর সাধ্যমত।

অধ্যাপক সুধন দাস স্বপ্ন দেখেন অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ নির্ভরতা কমিয়ে একদিন প্রত্যেক পরিবারের থাকবে একটি করে ভেষজ বাগান। সেখান থেকেই ঔষধ সংগ্রহ করবেন পরিবারের সবাই। তার মতে ভেষজ বাগান থেকে হতে পারে বহু বেকার যুবকের কর্মসংস্থান।

news24bd.tv তৌহিদ