<p>বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস</p>

আমরা কি আসলেই নিরাপদ খাদ্য খাচ্ছি ?

সুষম ও নিরাপদ খাবার যেমন মানুষকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে তেমনি অনিরাপদ খাদ্য মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা প্রচলিত যে খাবার খাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পেট ভরা। যেন তেন ভাবে পেট ভরলেই তাকে খাবার হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। তারা মনে করে খাবার খেলেই হলো; পুষ্টি কী আর নিরাপদ খাদ্য কী এই বিষয় নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। খাদ্যের গুণাগুণ তো দূরের কথা সেটি নিরাপদ নাকি তা নিয়ে বেশিরভাগেরই কোনো চিন্তা নেই। আবার অনেকেই মনে করেন নামিদামি খাবার মানে হয়তো অনেক পুষ্টিকর খাবার। স্বল্প দামি খাবারও যে অনেক নামিদামি খাবারের চেয়ে পুষ্টিকর হতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। খাবার কেনার সময় বা গ্রহণ করার সময় সেটি দাম যাচাই না করে গুণাগুণ ও নিরাপদ নাকি সেটা যাচাই করতে হবে।

নিরাপদ খাদ্য হলো মানসম্মত, ভেজাল মুক্ত ও সঠিক গুণাগুণ সম্মত খাবার। নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে আমরা এখনও উদাসীন। আমরা অনেকেই সময় বাঁচাতে সহজলভ্য, আকর্ষণীয় ও রেডিমেড খাবারে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

গরমে বাহিরে বের হলে প্রবল তৃষ্ণায় অনেকেই পান করে থাকে রাস্তার পাশের আকর্ষণীয় নানা ধরনের লেবুর শরবত, ফলের জুস, রংবেরঙের পানীয় শরবত। যেগুলোতে ব্যবহৃত বরফের বেশিরভাগই বিশুদ্ধ নয়, জীবাণুযুক্ত নালার পানি ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এসব বরফ। আবার মিষ্টি স্বাদ আনতে ক্ষতিকর স্যাকারিন, আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হয় টেক্সটাইলের বিভিন্ন রং ও কেমিক্যাল। রাস্তার অলিতে-গলিতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ভাজাপোড়ার দোকান, সিংগারা, পুরি, চপ, কোথাও চটপটি আবার কোথাও কোথাও টক-ঝাল মেশানো চটপটি। এসব খাবার দেখতে খুব আকর্ষণীয় ও লোভনীয়; কিন্তু এই খাবারগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই পঁচা-বাসি সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। ভাজার ক্ষেত্রে একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয় যেখানে তৈরি হয় ট্র্যান্স ফ্যাট। অনিরাপদ দূষিত পানিতে নানা উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা হয় টক পানি।

রাস্তার অলিতে-গলিতে গড়ে উঠেছে ফাস্টফুড, ছোট ছোট ফুডকোর্ট, যেগুলো এখন রাস্তার ফুটপাতের যেন একটি অংশ। সেখানে চলছে কম দামে নানা ফাস্টফুড জাতীয় খাবারের রমরমা বেচাকেনা। খাবারের স্বাদ ও আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা স্বাদ বর্ধক উপাদান ব্যবহার করা হয়। টেস্টিং সল্ট, নানা ধরনের সস ও ক্যাচাপ ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে খাবারের স্বাদ বাড়াতে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট এর ব্যবহার যেন মাত্রাতিরিক্ত আকার ধারণ করেছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেকের বাসায় সকালে শুরুটা কিংবা বিকেলের নাস্তা সব সময় উপস্থিত থাকে পাউরুটি ও নানা ধরনের বেকারি আইটেম। বর্তমানের নানা গবেষণায় দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলোতে ক্ষতিকর পটাশিয়াম ব্রোমাইড ও ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিত মাত্রাতিরিক্ত থাকে।

আমরা পুষ্টিবিদেরা সর্বদা বলে থাকি দেশীয় মৌসুমি ফলমূল ও শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখতে। নির্দিষ্ট মৌসুমের ফলমূল ও শাকসবজিতে ক্ষতিকর উপাদানের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। নির্দিষ্ট মৌসুম ছাড়া ও দেশের বাহিরের  নামিদামি বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজি সংরক্ষণের জন্য ফরমালিন জাতীয় বিভিন্ন সংরক্ষক ব্যবহার করা হয়।

খাবারে উপরিউক্ত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান ও দূষিত পদার্থ মেশানোর ফলে খাবার অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ সকল অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীরে সহজে বার্ধক্য আসছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে, কিডনির বিকলাঙ্গতা তৈরি হচ্ছে ও শরীরে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। অনিরাপদ খাদ্য রোগের জন্ম দেয়, অপুষ্টিকর খাদ্য স্বাস্থ্যহানি ঘটায়, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে, অসুস্থ ও দুর্বল সন্তানের জন্ম দেয়, তারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল থাকে। দুর্বল স্বাস্থ্যের জনগোষ্ঠী দিয়ে সুস্থ, সবল ও কর্মঠ জাতি গঠন সম্ভব হয় না। এক কথায় দেশ ও জাতি হুমকির মুখে পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতি দশজনের মধ্যে একজন খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত। নিরাপদ খাদ্য সুস্বাস্থ্যের উৎস হলেও অনিরাপদ খাদ্য অনেক রোগের কারণ। সেজন্য সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে রোগ মুক্ত বা রোগের জটিলতা মুক্ত থাকতে হলে খাদ্য নিবার্চনের আগে সেটা কতটুকু নিরাপদ সেটা যাচাই করতে হবে।

পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ, গুলশান ডায়াবেটিক কেয়ার

news24bd.tv তৌহিদ