নাসিমের দুই ছক্কায় পাকিস্তানের অবিশ্বাস্য জয় 

দলটা আনপ্রেডিক্টেবল কি-না! একটা সময় সহজ জয়ের পথেই ছিল পাকিস্তান। সেই মসৃণ পথ একটা সময় কঠিন হয়ে দাঁড়াল ব্যাটারদের ভুলে। তাতে ম্যাচটা প্রায় চলে গিয়েছিল আফগানিস্তানের হাতে। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে সেই ম্যাচ আবার জিতে নিল পাকিস্তান। শেষ ওভারে পরপর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে অভাবনীয়-অকল্পনীয় সেই জয় এনে দিলেন পেসার নাসিম শাহ।

নাসিমের এই দুই ছয়ে শুধু আফগানিস্তান নয়, এশিয়া কাপ পর্ব আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে গেল ভারতেরও। আর ১ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয়ে শ্রীলঙ্কাকে সঙ্গী করে ফাইনাল নিশ্চিত করল পাকিস্তান।

মাত্র ১৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানের শেষ চার ওভারে দরকার ছিল মাত্র ৩৯ রান। ১৭তম ওভারে দুই ছয়ে সমীকরণ আরও সহজ করে ফেলে দলটি। কিন্তু ওই ওভারে ১ উইকেট আর এরপরের দুই ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে বলতে গেলে ছিটকেই যায় পাকিস্তান।

শেষ ওভারে পাকিস্তানের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১১ রান। হাতে উইকেট মাত্র একটি। এই সমীকরণ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায় উইকেটে প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যাটার না থাকায়। কিন্তু নাসিম শাহ সব অসম্ভবকে সম্ভব করলেন মানসিক জোরে। শেষ ওভারে ফজল হক ফারুকির প্রথম দুই বলেই দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন এই তরুণ পেসার।

এতে ফারুকির দায়ও কম ছিল না। দুটি বলই তিনি ইয়র্কার দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুটি বলই ফুলটাস হয়ে পড়ে নাসিমের ব্যাটের সামনে। নাসিমও বেশি কিছু করেননি। স্রেফ তুলে মেরেছেন লং-অফের ওপর দিয়ে। আর দুটি বলই গিয়ে পড়েছে সাইটস্ক্রিনের ওপরে। তাতে আফগানরা কেঁদেছে, হেসেছে পাকিস্তান। ফাইনাল নিশ্চিতের পর শারজায় তাদের উদযাপনটা ছিল দেখার মতোই।

তা হবে নাই বা কেন! ম্যাচটা যে শুরু থেকেই দুলছিল পেন্ডুলামের মতো। ১৩০ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই অধিনায়ক বাবর আজমকে হারায় পাকিস্তান। বাবর ফেরেন শূন্য রানে ওই ফারুকির বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পা দিয়ে। ইন-ফর্ম মোহাম্মদ রিজওয়ানও টিকলেন না বেশিক্ষণ। ২০ রান করে তিনিও বাবরের কায়দায় সাজঘরে ফিরলেন রশিদ খানের শিকার হয়ে।

রিজওয়ানের আগে ফখর জামানকেও হারায় পাকিস্তান। ফখর কাউকে উইকেট দেননি। ৫ রান করে রান আউটের শিকার তিনি। ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তান যখন ভীষণ চাপে, তখন দলের হাল ধরেন ইফতিখার আহমেদ এবং শাদাব খান। তাদের জুটিতেই পাকিস্তান জয়ের পথ প্রায় মসৃণ করে ফেলেছিল।

তবে পরপর দুই ওভারে ইফতিখার-শাদাব দুজনেই হাঁটলেন সাজঘরের পথে। ৩০ রান করা ইফতিখারকে ফেরান ফরিদ আহমেদ। আর ৩৬ রান করা শাদাব শিকার রশিদের। এরপর মোহাম্মদ নওয়াজ (৪), খুশদিল শাহ (১), হারিস রউফরা (০) এলেন আর গেলেন!

উইকেটে তখন পাকিস্তানের একমাত্র ভরসা আসিফ আলি। ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে ফরিদকে ছক্কা মেরে সেই ভরসার কারণটা জানিয়ে দেন তিনি। তবে পরের বলেই পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন। ১৬ রানে ক্যাচ দিলেন শর্ট ফাইন লেগে! ওখানেই পাকিস্তানের শেষ দেখেছিল সবাই। কিন্তু এরপরই নাসিমের ওই দুই ছক্কা! তাতে হারা ম্যাচ ৪ বল হাতে রেখেই পাকিস্তানের পকেটে।  

এর আগে শারজায় টস হেরে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানের শুরুটা মন্দ হয়নি। উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ৩৬ রান। তবে ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ফিরতেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে শুরু করে আফগানরা। ১৭ রানে গুরবাজ ফেরার পর ২১ রান করে তার দেখানো পথে হাঁটে হজরতুল্লাহ জাজাই।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে করিম জানাতকে নিয়ে ইব্রাহিম জাদরান ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন। তবে দলীয় ৭৮ রানে এই জুটি ভাঙতেই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি আফগানরা। করিম ফেরেন ১৫ রান করে। এরপর একে একে নাজিবুল্লাহ জাদরান ১০, মোহাম্মদ নবি ০ এবং ইব্রাহিম জাদরান দলীয় সর্বোচ্চ ৩৫ করে সাজঘরের পথ ধরেন।

শেষের দিকে রশিদ খান ১৮ রানের ইনিংসের সুবাদে ১২৯ রানে গিয়ে থাকে আফগানদের রানের চাকা। পাকিস্তানের হয়ে দারুণ বোলিং করেছেন নাসিম শাহ এবং হারিস রউফ। নাসিম একটি উইকেট পেলেও, হারিস পেয়েছেন দুটি। একটি করে উইকেট পেয়েছেন মোহাম্মদ হাসনাইন, মোহাম্মদ নওয়াজ এবং শাদাব খানও।  

news24bd.tv/সাব্বির