এক বছর পর টি২০ সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

হুট করেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে টি২০ সিরিজ আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। লক্ষ্য ছিল, ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে যথাযথ প্রস্তুতি সাড়ার। সঙ্গে জয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার। বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যে শতভাগ সফল।

আজ দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচও জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে কষ্টেসৃষ্টে জয় পেলেও, আজ স্বাগতিকদের ৩২ রানে হারায় টাইগাররা। ফলে ২-০ ব্যবধানেও সিরিজও জিতল নুরুল হাসান সোহানের দল।

আমিরাতের বিপক্ষে এই জয়ে এক বছরেরও বেশি সময় পর টি২০ ফরম্যাটে কোনো সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। এর আগে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে সবশেষ টি২০ সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে ৩-১ ব্যবধানের সেই সিরিজ জয় ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

আজ মঙ্গলবার দুবাইয়ে বাংলাদেশ টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে তোলে ১৬৯ রান। ১৭০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে প্রথম ৭ ওভারেই। এ সময় দলটি হারায় ৪ উইকেট। রান তোলে মাত্র ৩০। এরপর চুন্দনগাপোয়িল রিজওয়ান এবং বাসিল হামিদের প্রতিরোধ স্রেফ হারের ব্যবধান কমায়।

রান তাড়ায় নামা আরব আমিরাত পাওয়ারপ্লেতে ২৮ রান তুলতেই হারায় ২ উইকেট। চিরাগ সুরিকে ৫ রানে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে শুরুতেই ব্রেক-থ্রু এনে দেন নাসুম আহমেদ। দলীয় ২৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এবার মুহাম্মদ ওয়াসিমকে (১৮ রান) ফিরিয়ে দলকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন তাসকিন আহমেদ।

আরব আমিরাত বড় ধাক্কা খায় সপ্তম ওভারে। পার্ট-টাইমার মোসাদ্দেক হোসেন বল হাতে তুলে নিয়েই এক ওভারে ফিরিয়ে দেন আরিয়ান লাকরা এবং বৃতয়্যা অরভিন্দকে। লাকরা ৪ রান করে ক্যাচ দেন নাসুমকে। আর ২ রান করা অরভিন্দকে বোল্ড করেন মোসাদ্দেক।

সপ্তম ওভারে দুই উইকেট হারানো আমিরাত পঞ্চম উইকেট হারায় ১৯তম ওভারে গিয়ে। এ সময়টায় বাংলাদেশি বোলারদের সামলে স্কোরবোর্ডে রান তুলে গেছেন রিজওয়ান এবং হামিদ। পঞ্চম উইকেট জুটিতে তারা স্কোরবোর্ডে তোলেন ৯০ রান। ৪২ রান করা বাসিলকে আফিফ হোসেনের ক্যাচ বানিয়ে এই জুটি ভাঙেন এবাদত হোসেন।

মারমুখী ব্যাটিং করা রিজওয়ান অবশ্য অপরাজিতই থেকে যান। পান ফিফটির দেখাও। ৩৬ বলে ৫১ রান ইনিংস খেলে জাওয়ার ফরিদকে (8 রান) নিয়ে ম্যাচ শেষ করে ফেরেন তিনি। সেটা অবশ্য আক্ষেপকে সঙ্গী করে।

এর আগে, আমিরাতের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা মন্দ হয়নি। সাব্বির রহমান ৬ মেরে বড় কিছুর আভাস দিলেও ফেরেন ১২ রান করেই। আরিয়ান লাকলার স্পিনে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। এরপর লিটন কুমার দাসকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে পাওয়ারপ্লে শেষ করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

পাওয়ারপ্লেতে মাত্র ১ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রান তোলে ৪৮। পাওয়ারপ্লে শেষ হলেও ওভার প্রতি ৮ করেই রান তুলছিল টাইগাররা। লিটন খেলছিলেন দারুণ। তবে আফজাল খানের বলে বেশি সময় নিয়ে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা কার্তিক মায়াপ্পানকে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ২০ বলে লিটন করেন ২৫ রান।

দুই ওভার পর মায়াপ্পান আবারও উচ্ছ্বাসের কারণ হয়ে এলেন স্বাগতিকদের জন্য। ডিপ মিড উইকেটে অসাধারণ এক ক্যাচ ধরেন তিনি। লিটন ফেরার পর নেমেই হাতখুলে খেলছিলেন আগের ইনিংসে ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ইনিংস খেলা আফিফ হোসেন ধ্রুব। তবে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক ব্যাটিং-ই কাল হলো তার। আফজালের ফুলটাস মাঠ ছাড়া করতে গিয়েই ১৮ রানে মায়াপ্পানকে ক্যাচ দেন তিনি।

লিটন-আফিফরা একপাশ থেকে আক্রমণ করতে গিয়ে আউট হচ্ছিলেন বটে, তবে অন্যপ্রান্তে সিঙ্গেলস বের করে ইনিংস বড় করছিলেন মিরাজ। তবে একটা সময় তিনিও চড়াও হতে চাইলেন। ১৫তম ওভারে সাবির আলীর বলে দুটি বাউন্ডারিও মারলেন। তবে পঞ্চম বলে স্লগ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ তিনি। আম্পায়ার আউট দিলেও পরে রিপ্লেতে দেখা যায় সাবিরের ডেলিভারিটি পিচ করেছিল আউটসাইড লেগে। ডিআরএস প্রযুক্তি না থাকায় ফিফটি থেকে চার রান দূরে থাকা মিরাজ রাগে গজরাতে গজরাতে ছাড়েন মাঠ।

মিরাজ ফেরার পর ১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১২৬ রান। শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশ আরও তোলে ৪৩ রান। তার পুরো কৃতিত্বই সোহান-রাব্বির। ১৬ ও ১৭তম ওভারে মাত্র ১১ রান তুলতে সক্ষম হয় সফরকারীরা। এর মধ্যে ১৬তম ওভারের শেষ বলে সেট ব্যাটার মোসাদ্দেক স্লগ সুইপ করতে গিয়ে উইকেট দেন সেই মায়াপ্পানকে।

শেষ তিন ওভারে বাংলাদেশ হারায়নি কোনো উইকেট। এই তিন ওভারে টাইগারদের স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৩২ রান। রাব্বি ১৩ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। আর ১০ বল খেলা সোহানের ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। দুজনই একটি করে চার এবং ছয় হাঁকিয়েছেন।

news24bd.tv/সাব্বির