ছাড়া পেলেন দুর্ধর্ষ 'বিকিনি কিলার'

সত্তর এবং আশির দশকে একাধিক হত্যাকাণ্ডের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সিরিয়াল কিলার চার্লস সোভরাজকে মুক্তি দিয়েছে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট। প্রায় ২০ বছর কারাবন্দী থাকার পর অবশেষে মুক্তি মিলছে দুর্ধর্ষ এই খুনির। তার আইনজীবী বলেছেন, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফ্রান্সে পাঠানো হবে তাকে।

এশিয়াজুড়ে সত্তর এবং আশির দশকে ২০ জনেরও বেশি বিদেশি ব্যাকপ্যাকার পর্যটককে তিনি হত্যা করেছেন বলে সন্দেহ করা হয়। খাবার অথবা পানীয়র সঙ্গে মাদক মিশিয়ে সবকিছু লুট করার পর তাদের হত্যা করতেন তিনি। তার হত্যাকাণ্ডের শিকার বেশিরভাগ নারীকে কেবল বিকিনি পরা অবস্থায় পাওয়া যেতো। যে কারণে তিনি ‘বিকিনি কিলার’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

১৯৭৫ সালে আমেরিকান ব্যাকপ্যাকার পর্যটক কনি জো ব্রোনজিচকে হত্যার দায়ে ২০০৩ সালে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাকে। তখন থেকে কাঠমান্ডুর একটি হাই-সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। যদিও মার্কিন ওই নারীকে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন সোভরাজ। তার আইনজীবী বলেছেন, সোভরাজের বিরুদ্ধে অনুমানের ভিত্তিতে অভিযোগ আনা হয়েছিল।

নেপালে গ্রেপ্তারের কয়েক বছর পর কনি জো ব্রোনজিচের কানাডীয় বন্ধু লরেন্ট কেরিয়ারকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন সোভরাজ। পরে তিনি আরও অনেক হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়।

সত্তর দশকের মাঝের দিকে থাইল্যান্ডের সরকার সোভরাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ছয়জন নারীকে মাদক পান করিয়ে হত্যার দায়ে তার বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করা হয়। দেশটির পাতায়া সমুদ্র সৈকতের কাছে ওই ছয় নারীর মরদেহ পাওয়া যায়; যাদের শরীরে বিকিনি ছাড়া অন্য কোনও পোশাক ছিল না। থাইল্যান্ডে সোভরাজ সেই সময়ই ‘বিকিনি কিলার’ নামে পরিচিতি পান।

কিন্তু থাইল্যান্ডের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়। পরে ভারতে একই ধাঁচের হত্যাকাণ্ডের দায়ে সোভরাজকে গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ। ১৯৭৬ সালে ভারতে প্রথম গ্রেপ্তার হন সোভরাজ। প্রায় দুই দশক বন্দি থাকার পর ১৯৮৬ সালে ভারতের কারাগার থেকে পালিয়ে যান তিনি। পরে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কিছুদিনের মধ্যে আবারও তাকে গ্রেপ্তার করে। ভারতে সাজা ভোগ করার পর ২০০৩ সালে নেপালে যান সোভরাজ। এবার নেপালের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাকে আবার গ্রেপ্তার করে।

বুধবার নেপালের সুপ্রিম কোর্ট কুখ্যাত এই খুনিকে মুক্তির আদেশ দিয়েছে। দেশটিতে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশের মধ্যে ১৯ বছর ভোগ করেছেন তিনি। তার বয়স বিবেচনায় এক বছর আগে এই মুক্তির আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নেপাল।

ভিয়েতনামে ভারতীয় বাবা এবং ভিয়েতনামী মায়ের ঘরে জন্ম সোভরাজের। পরে ফরাসি নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন তিনি। সহযোগীরা তাকে একজন ধূর্ত, লোভী, দুর্ধর্ষ ডাকাত এবং একজন খুনি হিসেবে বর্ণনা করেন। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের একটি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ‘ছদ্মবেশ’ ধারণের অবিশ্বাস্য কৌশলের কারণে ‘সর্প’ নামেও ডাকা হতো সোভরাজকে। কিন্তু ভারতের পুলিশের হাতে আবারও গ্রেপ্তান হন তিনি। পরে দেশটিতে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কারাবন্দি ছিলেন চতুর এই খুনি।

ভারত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর অবশ্য ফ্রান্সে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৭৫ সালের কনি জো ব্রোনজিচ ও কেরিয়ার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে ২০০৩ সালে কাঠমান্ডুর একটি ক্যাসিনো থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বছর বিবিসি এবং নেটফ্লিক্সের যৌথ প্রযোজনায় ‘দ্য সার্পেন্ট’ নামের একটি ধারাবাহিক সিরিজ বের হয়েছে। এতে সোভরাজের একের পর এক নিখুঁত হত্যাকাণ্ড, ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা, কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার মতো সব ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

news24bd.tv/আজিজ