পাহাড়কে অশান্ত করার চেষ্টা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেকে সামনে রেখে পাহাড়কে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কয়েকটি পাহাড়ি সংগঠন। প্রতিরাতে গ্রামে-গ্রামে মহড়াসহ নানা গুজব ছড়িয়ে পাহাড়িদের গ্রাম ছাড়তে বলছে তারা। এতে পাহাড়ের বিভিন্ন লোকালয়ে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। গুজবের সূত্র ধরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে দিয়ে নগদ টাকা যোগাড় করে রাখছে, যাতে বিপদের সময় তারা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমাতে পারেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইনকে বলেন, ‘আঞ্চলিক দলগুলো আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই গুজবের কৌশল বেছে নিয়েছে। তবে সরকারি সংস্থাগুলো গুজব ঠেকাতে নানা ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। ’

স্থানীয় বাসিন্দা, নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে ৩ পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠনগুলো ধারাবাহিকভাবে উঠান বৈঠক করছে।  

এসব উঠান বৈঠকে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র মতো রাজনৈতিক দলগুলোকে যাতে করে উপজাতীয় বাসিন্দারা ভোট প্রদান না করে, সে বিষয়ে স্পষ্টভাবেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বৈঠকগুলোতে আঞ্চলিক দলগুলোর ক্যাডাররা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উপস্থিত থাকছে।  

এদিকে, আতঙ্কগ্রস্ত নিরীহ পাহাড়ি লোকজন তাদের হাঁস-মুরগি, গবাদি পশুসহ সৃজিত বৃক্ষ বাগানগুলো বিক্রি করা শুরু করে দিয়েছে বলেও গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে আসে।

নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বাঘাইছড়ির আদিবাবু, জুড়াছড়ির শিমন চাকমার নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জুম্মদেরকে আবারও শরণার্থী বানানোর কথা বলা হচ্ছে। সমপ্রতি রাঙ্গামাটির দূরছড়ি বাজারে আয়োজিত বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায়ও উপজাতীয় ব্যক্তিবর্গ এই ধরনের বিষয় তুলে ধরে বাসিন্দাদের নিরাপত্তায় নিরাপত্তাবাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করেন।

উলুছড়ির এক কার্বারীও (গ্রাম প্রধান) এমনই বিষয়ের ইঙ্গিত করে তার এলাকার নিরাপত্তায় সহযোগিতা কামনা করেন। এই সভায় খাগড়াছড়ির এক সেনা কর্মকর্তা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। লংগদু সেনাজোনের জোন কমান্ডার ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন।

এ বিষয়ে জেএসএস নেতা ও বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বড় ঋষি চাকমা বলেন, ‘আমাদের প্রতিপক্ষ এই ধরনের ভীতিকর গুজব ছড়াচ্ছে। ’   এই ধরনের গুজব ছড়ানোর বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এ বিষয়ে তথ্য এসেছে। এটা নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট্যদের সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছি। এই ধরনের গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করে আমরা ব্যবস্থা নিবো। ’ বাসিন্দাদের এই বিষয়ে কোনো প্রকার আতঙ্কিত না হওয়ারও আহবান জানিয়েছেন রাঙামাটির ডিসি।   অপরদিকে, এই ধরনের তথ্য পুলিশ বিভাগও জানতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির। বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সাথেই নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এসপি জানান, এই কাজের সাথে কারা কারা জড়িত, তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথা সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেলেই আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ’ কবির/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর