জুমার নামাজ একাকী পড়া যায় না কেন

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য শুক্রবার জুমার নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করা আবশ্যক। কেউ শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া জুমার জামাতে অংশগ্রহণ না করলে গুনাহগার হবে। কেউ যদি কোনো কারণে জুমার জামাতে উপস্থিত হতে না পারে, তবে সে জোহরের নামাজ আদায় করবে। জুমার নামাজের আজান হওয়ার পর জুমার নামাজের প্রস্তুতি ছাড়া অন্য কোনো জাগতিক কাজে লিপ্ত থাকাও বৈধ নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কোরো, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি করো। ’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অবহেলার কারণে তিন জুমা ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস :  ১৩৬৯)

প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলাম জুমার জামাতের প্রতি এত গুরুত্বারোপ কেন করল? এবং জামাত ছাড়া জুমার নামাজ কেন আদায় করা যায় না? দার্শনিক আলেমরা এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, জুমার নামাজ দ্বারা শুধু নামাজই উদ্দেশ্য নয়, বরং এর দ্বারা দ্বিনের প্রচার-প্রসার, ধর্মীয় জ্ঞানের চর্চা, ধর্মীয় বিধি-বিধান বাস্তবায়ন, সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ, জান্নাতের সুসংবাদ ও জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করা এবং মুসলিম সমাজে ঐক্য ও সামাজিক সম্প্রীতি সৃষ্টি করাও উদ্দেশ্য। আর এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য জুমার নামাজের জন্য জামাত, খুতবা পাঠ ও উচ্চৈঃস্বরে কোরআন তিলাওয়াতের বিধান দেওয়া হয়েছে। (আহকামে ইসলাম আকল কি নজর মে, পৃষ্ঠা ৭৯)

আর যেহেতু একাকী নামাজ আদায় করলে উল্লিখিত উদ্দেশ্যগুলো পূরণ হয় না, তাই জুমার নামাজ একাকী আদায় করা যায় না; এমনকি জুমার জামাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য ফিকহ শাস্ত্রের ইমামরা নির্দিষ্টসংখ্যক ব্যক্তির উপস্থিত হওয়ার শর্তারোপ করেছেন। সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) বলেন, জুমার প্রকৃতি, তার কল্যাণ ও উপকারিতার দাবি হলো, শহরের কেবল এক মসজিদেই আদায় করা হবে। শহর বড় হলে একাধিক মসজিদেও আদায় করা যেতে পারে। সব মুসলমান সপ্তাহে এক দিন একবার এক স্থানে একত্র হবে। এতে তাদের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব দৃঢ় হবে। অন্যদিকে জামাতে অংশ-গ্রহণের কারণে মুসলমানের বিশ্বাস ও আমল বিকৃতি ও বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

তিনি আরো লেখেন, একজন দায়িত্বশীল, ব্যস্ত, জীবন-জীবিকার সন্ধানে ক্লান্ত মানুষের জন্য এমন একটি দিন থাকা আবশ্যক, যে দিনটি তার ভেতর নতুন উদ্যম ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করবে; স্বস্তি ও প্রশান্তির সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত করবে, তার নৈকট্য লাভের সাধনায় লিপ্ত হবে; যে দিনে সে সপ্তাহজুড়ে অন্তরে জমা হওয়া কলুষ দূর করবে, অন্যদিনের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করবে। সপ্তাহের সেই প্রার্থিত দিনটিই হচ্ছে জুমার দিন। ঠিক যেমন পুরো বছরের জন্য রমজান মাস এবং রমজান মাসের জন্য লাইলাতুল কদর। (আরকানে আরবাআ, পৃষ্ঠা ৭৭)

এ জন্যই ইসলাম জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা এবং জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জুমার জামাতে আগে আগে উপস্থিত হতে উৎসাহিত করেছে। শুধু আত্মিক প্রশান্তি নয়, বরং দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তির জন্য জুমার দিনে গোসল করা, উত্তম পোশাক পরিধান করা এবং সুগন্ধি ব্যবহারের বিধান দিয়েছে। কোনো কোনো আলেম বলেন, যদি কোনো মুসলিম সাওয়াবের নিয়তে সামর্থ্য অনুযায়ী শুক্রবার উত্তম খাবার গ্রহণ করে, তবে আশা করা যায় ,আল্লাহ তাকে বঞ্চিত করবেন না।

news24bd.tv/ইস্রাফিল