খুঁজে খুঁজে অপরাধীদের খুন করতেন, অতঃপর..

মায়ের পেট থেকেই আঘাতপ্রাপ্ত ছিলেন। তার নাম পেড্রো রডরিগেজ ফিলহো। যিনি এক সময় একের পর এক খুন করেছেন।  ব্রাজিলের কুখ্যাততম সিরিয়াল কিলার। তবে অন্য যে সব সিরিয়াল কিলারের কথা প্রকাশ্যে এসেছে, তাদের মধ্যে ফিলহো ব্যতিক্রম। খবর আনন্দবাজার।

গত ৫ মার্চ সাও পাওলোর কাছে গুলি করে খুন করা হয় ফিলহোকে। তাকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি চালান আততায়ীরা। এরপরই চম্পট দেন তারা। ফিলহোর বয়স হয়েছিল ৬৮। ব্রাজিলের কুখ্যাততম সিরিয়াল কিলার বলা হয় ফিলহোকে। কিন্তু কেন?

১৯৫৪ সালের ১৭ জুন ব্রাজিলের মিনাস গেরাই প্রদেশে জন্ম ফিলহোর। জন্মের আগে থেকেই ফিলহোর জীবনে ক্ষত তৈরি হয়। ফিলহো যখন তার মায়ের গর্ভে ছিলেন, সেই সময় মাথায় চোট পেয়েছিলেন। পারিবারিক অশান্তির জেরে ফিলহোর মায়ের পেটে লাথি মেরেছিলেন তার বাবা। এর জেরে ভ্রুণ অবস্থায় মাথায় চোট লেগেছিল ফিলহোর। ক্ষত নিয়েই জন্মেছিলেন ফিলহো। তারপর যত দিন গড়িয়েছে, অন্য খাতে বয়েছে তার জীবন। ছোট থেকেই খুন করার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল ফিলহোর মধ্যে। যার প্রথম আভাস পাওয়া গিয়েছিল, যখন ফিলহোর ১৩ বছর বয়স ছিল।

সেই সময়ে এক চাচাত ভাইয়ের সঙ্গে হাতাহাতি বেধেছিল ফিলহোর। আখের খেতে সেই ভাইকে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। মারের চোটে তাকে আধমড়া করে দিলেও সেই সময় ভাইয়ের প্রাণ কাড়েননি ফিলহো।

ফিলহোর যখন ১৪ বছর বয়স, সেই সময়ই প্রথম খুন করেন তিনি। সান্তা রিতা দো সাপুকাই পুরসভার ডেপুটি মেয়রকে গুলি করে খুন করেছিলেন ফিলহো। শহরের একটি স্কুলে রক্ষী হিসাবে কাজ করতেন ফিলহোর বাবা। অভিযোগ ওঠে, স্কুলের রান্নাঘর থেকে খাবার চুরি করেছেন তার বাবা। এই অভিযোগে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয় তাকে। বাবার চাকরিচ্যুত হওয়ার বদলা নিতে শহরের ডেপুটি মেয়রকে খুন করেন ফিলহো। স্কুলের রান্নাঘর থেকে খাবার চোর সন্দেহে এক নিরাপত্তারক্ষীকেও খুন করেছিলেন তিনি। দাদুর পিস্তল দিয়ে সেই সময় খুনে হাত পাকিয়েছিলেন ফিলহো।

এরপর থেকেই পালিয়ে বেড়াতে থাকেন ফিলহো। সেই সময় একাধিক মাদক কারবারিদের খতম করেন তিনি। যার ফরে খবরের শিরোনামে আসেন ফিলহো। সেই সময়ই মারিয়া অলিম্পিয়া ওরফে বোতিনহা নামে এক নারীর সঙ্গে আলাপ হয় ফিলহোর। সেই আলাপ প্রেমে গড়ায়। একত্রবাস শুরু করেন তারা।

অন্তঃসত্ত্বা হন বোতিনহা। সে সময় কয়েক জন দুষ্কৃতী তাকে গুলি করে খুন করেন। এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছিলেন ফিলহো। এর বদলা নিতে অপরাধীদের পুরো দলকে খুঁজে বার করে হত্যা করেন ফিলহো। নিজেকে ‘সমাজের রক্ষক’ মনে করতেন ফিলহো। বেছে বেছে অপরাধীদেরই তিনি খুন করতেন। মাদক পাচারকারী, ধর্ষক এবং অন্য অপরাধীদের হত্যা করতেন তিনি।

৭১টি খুনের ঘটনায় সাজা পেয়েছিলেন ফিলহো। তবে দাবি করা হয় যে, একশো’রও বেশি খুন করেছেন ফিলহো।

১৯৭৩ সালের ২৪ মে। তখন ১৯ বছর বয়স ফিলহোর। সেই সময় প্রথম বার গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে। জেলবন্দি থাকার সময়ও হত্যালীলা চালিয়ে যান ফিলহো। খুন করেন এক বন্দিকে। ঐ বন্দি ধর্ষক হওয়ায় তাকে খুন করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন তিনি। তাকে ১২৬ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তার আগেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারণ ব্রাজিলের আইন অনুযায়ী কাউকে ৩০ বছরের বেশি জেলে রাখা যায় না। ২০১৯ সালে এই সময় বাড়িয়ে ৪০ বছর করা হয়েছে।

৩৪ বছর ধরে কারাবাসের সাজা ভোগ করার পর ২০০৭ সালের ২৪ এপ্রিল ফিলহোকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর পর ২০১১ সালে আবার একাধিক মামলায় তাকে আরও ৮ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। জেলে ভালো আচরণের জন্য ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ফিলহোকে জেল থেকে ছাড়া হয়। এরপরই তিনি ঘোষণা করেন যে, আর খুন করবেন না।

দ্বিতীয় বার জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বদলে যান ফিলহো। খুনি থেকে হয়ে যান ইউটিউবার। আধুনিক সময়ে অপরাধের ঘটনা নিয়ে ইউটিউবে নানা ভিডিও বানাতেন তিনি। অপরাধের ঘটনায় যাতে দেশের তরুণরা না জড়ান, সেই বার্তাও দিতেন তিনি।

ব্রাজিলের সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিরিয়াল কিলারকেই কিনা খুন করা হল! চলতি বছরের ৫ মার্চ ফিলহোকে গুলি করে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেন দুই যুবক। ফিলহোর মৃত্যুর সঙ্গেই ব্যতিক্রম অপরাধের এক অধ্যায়ের যবনিকা পতন ঘটল। news24bd.tv/আলী