<p>বিশ্বব্যাংক ও এডিবি'র পর্যালোচনা</p>

প্রবৃদ্ধি হবে ৫.২ শতাংশের ওপর

মূল্যস্ফীতির চাপে ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.৫ শতাংশ কমে ৫.২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক বহুপক্ষীয় ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট ট্রেড রিফর্ম : অ্যান আর্জেন্ট এজেন্ডা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হ্যাভেন।

পৃথক আরেক ব্রিফিংয়ে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ঢাকা অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এডিবির ঢাকা অফিসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সন চ্যাং হং বলেন, চলতি অর্থবছরে ৫.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যাডিমন গিনটিং উপস্থিত ছিলেন। সংস্থাটি ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০২৩’-এ প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করে।

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি মধ্যমেয়াদে ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমবে, অভ্যন্তরীণ অবস্থার উন্নতি হবে এবং সংস্কার বাস্তবায়নে গতি আসবে। তার পরও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, কঠোর আর্থিক অবস্থা, আমদানির ওপর বিধি-নিষেধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি চলতি বছরে ৫.২ শতাংশ হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ‘তবে পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ৬.২ শতাংশ। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বিশ্বের দেশগুলোকে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশে মহামারি-পরবর্তী সময়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। শক্তিশালী কাঠামোগত সংস্কার বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে বলেও জানান তিনি।

বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। দেশের অর্থনীতি একটি একক খাতের ওপর দাঁড়িয়ে, এটি ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশকে এখন একটি ভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে সরকার যে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা রেখেছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হলে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক ও সংস্থাটির ঢাকা অফিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরীন ই মাহবুব।

জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৩ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি ৮.৭ শতাংশ : ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৩ শতাংশ, একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৮.৭ শতাংশ হবে। মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধি নিয়ে ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০২৩’-এর আলোকে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সন চ্যাং হং। এ সময় সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যাডিমন গিনটিং বলেন, ‘সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক প্রতিকূলতার মধ্যেও তুলনামূলকভাবে ভালো করছে। পাশাপাশি সব খাতেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। এই সংস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহকে শক্তিশালী করা, আর্থিক খাতকে গভীর করা এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ানো। ’ তিনি বলেন, ‘দেশের জলবায়ু এজেন্ডার সঙ্গে সংগতি রেখে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে দেশীয় নবায়নযোগ্য শক্তি সরবরাহের দ্রুত সম্প্রসারণ করতে হবে। এ জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ’

এডিবির প্রতিবেদনে আরো উঠে এসেছে, বেসরকারি বিনিয়োগ কম হবে, কারণ জ্বালানি ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে নানা কারণে উৎপাদন খরচও বেশি। রাজস্ব সংগ্রহে ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং পাবলিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিও ধীর হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এডিবি ঢাকা অফিসের বহিঃ সম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বারিও উপস্থিত ছিলেন।