বান্দরবানে চলছে অবাধে পাথর উত্তোলন

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ৭ উপজেলায় পাহাড় খুড়ে ও বিভিন্ন খাল ঝিরি-ঝর্ণা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে।

ঝিরি-ঝর্ণা থেকে শুরু করে সংরক্ষিত বনাঞ্চলও রেহাই পাচ্ছেনা পাথর খেকোদের হাত থেকে। মাতামুহুরী রেঞ্জের বিভিন্ন ছড়া-ঝিরি থেকে অবৈধভাবে পাথর আহরণকালে রবিবার রাতে আলীকদম জোনের সেনা সদস্যদের অভিযানে ১১ জন পাথর শ্রমিক আটক করা হয়েছে। তার পরেও থেমে থাকেনি পাথর উত্তোলন।

এদিকে ঝিরি-ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে পানির উৎসগুলো এতে দেখা দিয়েছে পানি সংকট। আহরিত পাথর বড় পাথর মেশিনে ভেঙ্গে কংক্রিট করে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে।

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর, কাঁঠাল ছড়া, গয়ালমারা, ইয়াংছা, বদুরঝিরি, মিরিঞ্জা, লামা পৌরসভার লাইনঝিরি, হরিণঝিরি, শিলেরতুয়া, নুনারঝিরি, পশ্চিম মধুঝিরি, দরদরা ঝিরি, রুপসীপাড়া ইউনিয়নের মংপ্রু পাড়া, খইহ্লাচিং মার্মা পাড়া, কলারঝিরি, টিয়ারঝিরি, ফাইতং ইউনিয়নের নয়াপাড়া, ধর্মচরণ মেম্বার পাড়া, গজালিয়া ইউনিয়নের সীতারকুম, মিঝঝিরি, নিমন্দ মেম্বার পাড়া, লুলাইং, সরই ইউনিয়নের আন্দারী, লেমুপালং, আমতলী হতে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে চলছে পাথর আহরণ। এছাড়া রুমা, থানছি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর উত্তোলন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় বাসীন্দারা জানান, এলাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিমাত্রায় পাহাড় কেটে ও মাটি খোদাই করে পাথর আহরণ করায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এসব এলাকায় মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ঝিরি ও পাহাড় খুড়ে পাথর উত্তোলনের ফলে এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবারের পানির সংকট। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই অনেক এলাকায় গভীর নলকূপ ও রিংওয়েলে পানি উঠা বন্ধ হয়ে যায়।

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও  তৈন রিজার্ভ এর বিভিন্ন ছড়া, ঝিরি ও খাল হতে পাথর উত্তোলন প্রায় শেষ পর্যায়ে।

রোয়াংছড়ি উপজেলার বাসিন্দা অংশৈমং মারমা অভিযোগ করে বলেন, সরকারিভাবে খাল-ঝিড়ি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি যদি দিয়ে থাকে তাহলে তার পরিমাণটা কতখানি তা প্রশাসনের তদারকির দরকার রয়েছে। তবে অনুমতি প্রদানের মেয়াদ, পরিমাণের অধিক যদি উত্তোলন করা হয় তাহলে তা অবশ্যই প্রাকৃতিক সম্পদের উপর প্রভাব এবং এলাকায় পানি সংকটসহ নানামূখী সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রোয়াংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যবামং মারমা জানান, উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্প উন্নয়নের জন্য সচরাচর পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে। এসব উন্নয়নমূলক কাজে পাথরের জায়গায় ইট ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। তা না হলে প্রাকৃতিক বিপযর্য়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন জানান, পাথর উত্তোলনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া ছাড়াও আশপাশের পাড়াগুলোতে পানি সংকটসহ বনের জীব বৈচিত্র হুমকিরমুখে পড়েছে। পাহাড় খুড়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হলে অচিরেই পাহাড়ি এলাকা পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

পাথর উত্তোলনের বিষয়ে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, পাথর প্রাকৃতিক সম্পদ এবং আমাদের জনজীবনে প্রয়োজনও আছে। সেই ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব এবং উন্নয়নের কাজের জন্য পাথর উত্তোলন করতে হয়। তবে পরিবেশের ভারসাম্য এবং অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। কেউ যদি অবৈধ পাথর আহরণ ও পরিবহন করে থাকে তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

NEWS24▐ কামরুল