গুগল ছাড়ার পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ভয়ংকর বার্তা দিলেন ‘এই গডফাদার’

নিজের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর ভয়াবহতা সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দিয়ে গুগলের চাকরি ছাড়লেন ‘এই গডফাদার’খ্যাত জিওফ্রে হিন্টন। সিএনএন’র প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউরাল নেটওয়ার্কে হিন্টনের অগ্রগামী কাজ আজকের দিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অনেক ডিভাইসকে পূর্ণতা দিয়েছে। গুগলের এআই উন্নয়ন কর্মসূচির সাথে এক দশক ধরে তিনি যুক্ত ছিলেন। কিন্তু তারপর থেকেই তিনি এআই প্রযুক্তি ও এটিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক স্বাক্ষাতকারে হিন্টন বলেন, ‘আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিই যে আমি না করলেও অন্য কেউ এটা করত। ’

সোমবার একটি টুইটে তিনি লেখেন, ‘গুগলের সমালোচনা নয়, বরং এআই-এর ভয়াবহতা সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলার জন্যই আমি চাকরি ছেড়েছি। ’

‘আমি গুগলের চাকরি ছেড়েছি যাতে শুধু গুগল নয়, অন্য সকল প্রযুক্তিক্ষেত্রে এআই কিভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, তা ব্যাখ্যা করতে পারি। ’

‘তবে এক্ষেত্রে গুগল খুবই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে’, বলেন তিনি।

হিন্টনের প্রসংশা করে গুগলের প্রধান বিজ্ঞানী জেফ ডিন বলেছেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতের ভিত্তিই গড়ে দিয়েছেন হিন্টন। ’

সিএনএন-কে দেওয়া এক স্বাক্ষাতকারে ডিন বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমরা একটি দায়িত্বশীল পদ্ধতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাহসিকতার সাথে উদ্ভাবন করার পাশাপাশি আমরা এআই-এর নতুন ঝুঁকিগুলোও বুঝতে শিখছি। ’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এআই চ্যাটবটের কারণে ভুল তথ্য প্রচার ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে যুক্ত কর্মীদের চাকরি হারানোর শঙ্কায় যখন ক্রমবর্ধমান সংখ্যক আইন প্রণেতা ও অ্যাডভোকেসি গ্রুপ আশঙ্কা প্রকাশ করতে শুরু করেছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই গুগল থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন হিন্টন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এই ব্যাপক আগ্রহ গত বছরের শেষদিকে চ্যাটজিপিটি’র আবির্ভাবের পর থেকে শুরু হয়। এরপর থেকেই বিশ্বের বড় বড় ‘টেক জায়ান্ট’রা নিজেদের প্রস্তুতকৃত ডিভাইস ও সার্ভিসগুলোতে একইরকম ‘এআই টুল’র ব্যবহার করার প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। ওপেন এআই, মাইক্রোসফট ও গুগল এই প্রতিযোগিতার শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে আইবিএম, অ্যামাজন, বাইডু ও টেনসেন্ট-এর মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও ওই একই ধরণের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।

প্রযুক্তি জগতের কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তি ‘সমাজ এবং মানবতার জন্য গভীর ঝুঁকি’ উল্লেখ করে কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী এআই সিস্টেমের প্রশিক্ষণ বন্ধ করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ল্যাবগুলোর জন্য একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। চিঠিটি ওপেন এআই-এর জিপিটি-৪ ঘোষণা করার মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই স্বাক্ষরিত হয়।

জিপিটি-৪ প্রযুক্তির আরও শক্তিশালী সংস্করণ যা চ্যাট জিপিটি-কে আরও শক্তিশালী করে। প্রাথমিক পরীক্ষা ও একটি কোম্পানির ডেমোতে, জিপিটি-৪ মামলার খসড়া তৈরি করতে, মানসম্মত পরীক্ষায় পাস করতে এবং হাতে আঁকা স্কেচ থেকে একটি কার্যকরী ওয়েবসাইট তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।

নিউইয়র্ক টাইমসে দেওয়া স্বাক্ষাতকারে হিন্টন এআই-এর সক্ষমতার কারণে ‘চাকরি কমে সম্ভাবনা ও সত্য কি তা আর অনেকেই জানতে পারবে না’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এআই-এর এই অগ্রগতি ছিল হিন্টন ও অন্য প্রযুক্তিবিদদের কাছে অভাবনীয়।

এক স্বাক্ষাতকারে হিন্টন বলেন, ‘প্রযুক্তির এই বিষয়টি যে আসলে মানুষের চেয়েও স্মার্ট হয়ে উঠতে পারে, খুব কম লোকেই তা বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু অনেকেই ভেবেছিল যে সেই সময় আসতে এখনও অনেক দেরি। আমিই তো ভেবেছিলাম যে অন্ততঃ এই পর্যায়ে আসছে আরও ৩০ থেকে ৫০ বছর তো লাগবেই। তবে বুঝতেই পারছেন, আমি আর এমনটা ভাবি না। ’

তবে শুধু হিন্টনই প্রথম গুগলের কর্মী নন, গত বছরের জুলাই মাসে ডেটা সুরক্ষা নীতি লঙ্ঘন করার দায়ে কোম্পানিটি একজন প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করে। তিনিও অভিযোগ করেছিলেন যে একটি অপ্রকাশিত এআই সিস্টেম খুবই সংবেদনশীল হয়ে উঠছে। তবে তার ওই দাবিকে অনেক বিজ্ঞানীরাই তখন সমর্থন করেননি।

news24bd.tv/আলী