সেই জোসেফ-হারিস পরিবারের প্রাণনাশের হুমকিতে সাবেক ২ কাউন্সিলর

জোসেফ, হারিস ও আনিসের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি ও নৃশংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দুই সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ও তারেকুজ্জামান রাজীব।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করে বলেন, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সরাসরি ইন্ধনে গ্রেপ্তার করা হয় আমাদের। জেল থেকে বের হয়ে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাদের ভাতিজা আসিফ আহমেদকে কাউন্সিলর করার জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমাদের সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করানো হয়। অথচ আমরা নিরপরাধ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব বলেন, ‘আমি খুব অল্প বয়সে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি দেখে ঈর্ষান্বিত হয় ঢাকার সন্ত্রাসীগোষ্ঠী জোসেফ-হারিস আহমেদ-আনিস আহমেদ গংরা। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের ২০১৯ সালের অক্টোবরে আমাকে গ্রেপ্তার করানো হয়। এসব কিছু করা হয়েছে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তার সন্ত্রাসী ভাইদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। '

ভাতিজাকে কাউন্সিলর বানানো পরিকল্পনায় সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘নব্বইয়ের দশক থেকে জোসেফ-হারিস পরিবার ঢাকা শহরের সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। তবে তারা রাজনৈতিকভাবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। মোহাম্মদপুর তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পুরনো অভয়ারণ্য। সেই এলাকার একজন কাউন্সিলর ছিলাম আমি। '

তিনি বলেন, 'আমার জায়গায় তাদের ভাতিজা আসিফ আহমেদকে কাউন্সিলর বানাতে পরিকল্পিতভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করানো হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে আমাকে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত একটা মামলা কিংবা জিডি পর্যন্ত ছিল না। ’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'আমাকে আটকের পর রাতভর আমার বাসা ও অফিসে তল্লাশি অভিযান চলেছিল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের মতো করে সন্ধান করেছে। তবে অভিযান শেষে অভিযান পরিচালনাকারী দল গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, আমার কোনো ক্যাসিনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ সেই অভিযান ছিল ‘ক্যাসিনো অভিযান’। '

তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অঢেল সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এমনকি বিদেশে আমার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য-প্রমাণও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাদের তদন্তে পায়নি। ’ 

৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমি ফ্রিডম মিজান নই। ফ্রিডম মিজান সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ১৯৯৬ সালের ৭ মে মোহাম্মদপুরে আমার ভাই মোস্তাফিজুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই হত্যা মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার জজ আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে জোসেফ আপিল করলেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ এ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সেই মামলায় আরো আসামি ছিলেন জোসেফের ভাই হারিস আহমদ ও আনিস আহমদ। যারাও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। হারিস ও আনিস রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা পেয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এমনকি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও তাদের কারাগারে যেতে হয়নি। ’

তাদের বিরুদ্ধে এখনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার পর কারাগার থেকে মুক্তি পান ২০১৮ সালের মে মাসে। বড় ভাই হারিস আহমেদের হাত ধরে রাজনীতির মাঠে আসেন জোসেফ। একসময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন হারিস। নব্বইয়ের দশকে জাতীয় পার্টি ছেড়ে হারিস দলবদল করেন। বড় ভাইয়ের ক্যাডার বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করতেন জোসেফ। ওই সময় মোহাম্মদপুর-হাজারীবাগসহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন জোসেফ। যোগ দেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলোচিত সেভেন স্টার গ্রুপে। জোসেফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখনো চলছে। ’

তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে পরিবর্তিত এক পরিস্থিতিতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় আমাকে আটক করা হয়। যদিও এর আগে আমার নামে কোনো থানায় কখনো কোনো মামলা ছিল না। ওই সময় আমার বিরুদ্ধে সাজানো সব অভিযোগ আনা হয়। এমনকি আমার নামও বদলে দেওয়া হয়। আমার নাম দেওয়া হয় মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান। অথচ আমার নাম হাবিবুর রহমান মিজান। সরকারের ওই অভিযান ছিল ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে আমি সম্পৃক্ত না থাকলেও সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমার বাসায় থাকা মূল্যবান দলিলপত্র, টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যাওয়া হয়। যা মামলার জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। আজও তা আমি ফেরত পাইনি। ’

একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সরাসরি ইন্ধনে ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ-হারিস-আনিসের মদদে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন।