মহাকাশে নভোচারীদের মূত্র ও ঘামের ৯৮ শতাংশই পানযোগ্য হবে

সংবাদের মূলে রয়েছে পাঁচ শতাংশের উন্নতি আর একেই নাসা বলছে ‘বিশাল মাইলফলক’। মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীদের শরীর থেকে যে পানি বেরোয়, তার শতকরা ৯৮ ভাগই পানযোগ্য পর্যায়ে আনা যাবে বলে জানিয়েছে মার্কিন এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।

মানবদেহ থেকে পানি বেরোয় প্রধানত মূত্র ও ঘাম আকারে।

এই প্রযুক্তিগত মাইলফলক ভবিষ্যতে চাঁদ বা এর চেয়ে দূরবর্তী অভিযানগুলোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে নাসার অনুমান।

এই ঘোষণার মূলে রয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ‘এনভায়রনমেন্টাল কনট্রোল অ্যান্ড লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম (ইসিএলএসএস)’। এটিই নভোচারীদের শরীর থেকে নির্গত ৯৮ শতাংশ তরলকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। একে মার্কিন লেখক ফ্রাঙ্ক হার্বার্টের সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস ‘ডিউন’-এ বর্ণিত ‘স্টিলস্যুট’ পরিচালনা ব্যবস্থার সঙ্গে কল্পনা করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।

স্টেশনে থাকা নভোচারীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের আদ্রতা ও তাদের দৈনন্দিন কাজের সময় ঝরা ঘাম সংগ্রহ করতে ‘ইসিএলএসএস’-এর একটি অংশে ব্যবহৃত হয় উন্নতমানের ডিহিউমিডিফায়ার।

অন্যদিকে, ‘ইউরিন প্রসেসর অ্যাসেম্বলি’ নামের আরেক সহায়ক ব্যবস্থা ‘বায়ুশূন্য পাতনের’ মাধ্যমে নভোচারীর মূত্র সংগ্রহ করে।

নাসার তথ্য অনুসারে, পাতন প্রক্রিয়াটি পানি ও এমন ‘ইউরিন ব্রাইন’ উৎপন্ন করে, যা থেকে পরে বিশুদ্ধ পানি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। সংস্থাটি সম্প্রতি নতুন এক ডিভাইসের পরীক্ষা শুরু করেছে, যার মাধ্যমে ওই ‘ব্রাইন’-এ থাকা অবশিষ্ট পানি বের করে আনা যায়। আর ৯৮ শতাংশ পানি পুনরুদ্ধারের হার পর্যবেক্ষণ করা ব্যবস্থাটির কৃতিত্বে এমনটি ঘটেছে। এর আগে মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীদের প্রায় ৯৩ থেকে ৯৪ শতাংশ পানি পুনর্ব্যবহার করা যেত।

“লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের বিবর্তনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ” --বলেন নাসার প্রকৌশলী ক্রিস্টোফার ব্রাউন। এ ছাড়া, মহাকাশ স্টেশনে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম পরিচালনা দলের অংশও তিনি।

“ধরা যাক, আপনি স্টেশনে একশ পাউন্ড (৪৫ কিলোগ্রাম) পানি সংগ্রহ করেন। আপনি সেটি থেকে কেবল দুই শতাংশ হারাবেন। আর বাকি ৯৮ শতাংশ এতে ঘুরতেই থাকে। এটি অব্যহত রাখা বড় এক অর্জন। ”

অন্যের মূত্র পান করা কারো কারো কাছে খটকা লাগলেও ভয়ের কিছু নেই।

“এই প্রক্রিয়া মৌলিকভাবে স্থলজ পানি বন্টন ব্যবস্থার অনুরূপ। এটা কেবল ‘মাইক্রোগ্র্যাভিটি’তে করা হয়েছে। ” --বলেন নাসার ‘ইসিএলএসএস’ পানি সহায়ক ব্যবস্থার পরিচালক জিল উইলিয়ামসন।

“নভোচারীরা মূত্র নয় বরং এমন পানি পান করছেন, যেটি এমন উপায়ে পুনরুদ্ধার, ফিল্টার ও পরিষ্কার করা যে এটি আমাদের পৃথিবীর সুপেয় পানির চেয়েও পরিষ্কার। ”

উইলিয়ামসনের মতে, ইসিএলএসএস-এর মতো ব্যবস্থা কক্ষপথের বাইরের মিশনগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে নাসাকে সহায়তা দেবে।

“মহাকাশে আমরা যত কম পানি ও অক্সিজেন পাঠাবো, উৎক্ষেপণ করা রকেটে তত বেশি বিজ্ঞান যোগ করা যাবে। ” --বলেন উইলিয়ামসন।

“নির্ভরযোগ্য, মজবুত ‘রিজেনারেটিভ’ ব্যবস্থার মানে দাঁড়ায়, নভোচারীরা এটি নিয়ে চিন্তা না করে বরং নিজ মিশনের মূল লক্ষ্যে মনযোগ দিতে পারবেন। ”

news24bd.tv/আইএএম