সাংবাদিক খাসোগি নিখোঁজ

সৌদিকে হুশিয়ারি ট্রাম্পের

সৌদি আরবের ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হলে তার জন্য কঠোর শাস্তি পেতে হবে বলে সৌদিকে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একঘণ্টার এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, নিখোঁজ সৌদি সাংবাদিকের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এর তদন্ত করছে। যদি ওই সাংবাদিককে জীবিত না পাওয়া যায় তাবে এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে তুরস্ক সরকার মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছে যে, তারা জামাল খাসোগিকে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে। তাকে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর খুন করা হয়েছে। খুনের অডিও এবং ভিডিও প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।

জামাল খাসোগি ওয়াশিংটন পোস্টে নিয়মিত কলাম লিখতেন। তিনি এক সময় সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তবে সম্প্রতি তিনি বর্তমান সৌদি সরকার এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচনা করে সংবাদপত্রে লেখা ছাপিয়েছেন। মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) ব্যক্তিগত কাজে তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে যান। বাইরে রেখে যান তুর্কী বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিসকে। তবে কনসুলেট থেকে আর বের হননি ওই সংবাদিক।

চেঙ্গিস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, খাসোগি নিজের মোবাইল ফোনটি তার হাতে দিয়ে ভবনের ভেতরে ঢোকেন। ওই ভবনে ঢুকতে হচ্ছে বলে খাসোগি বিমর্ষ ছিলেন। খাসোগি তাকে বলে গিয়েছিলেন যদি তিনি কনস্যুলেট থেকে বের না হন - তাহলে তিনি যেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের একজন উপদেষ্টাকে ফোন করেন।

চেঙ্গিস জানান, তিনি কনস্যুলেটের বাইরে অপেক্ষা করেন মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর একটা থেকে মধ্যরাতের পর পর্যন্ত। কিন্তু জামাল খাসোগি কনস্যুলেট থেকে বের হননি। বুধবার সকালবেলা কনস্যুলেট খোলার সময় তিনি আবার সেখানে উপস্থিত হন। কিন্তু তাকে আর পাননি। এরপর থেকেই খাসোগি নিখোঁজ।   মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, তাদের হাতে আসা বিভিন্ন রেকর্ডিং-এ দেখা যাচ্ছে সৌদি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কনস্যুলেটের ভেতরে জামাল খাসোগিকে আটক করেছে, তারপর তাকে হত্যা করেছে এবং তার দেহকে খণ্ড-বিখন্ড করেছে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ওই সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, জামাল খাসোগির নিখোঁজের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র গভীর অনুসন্ধান চালাচ্ছে। যদি কোনভাবে প্রমাণ হয় যে, সৌদি সরকার তাকে হত্যার আদেশ দিয়েছে সেটা যুক্তরাষ্ট্র কিছুতেই ভালোভাবে নেবে না। এর জন্য সংশ্লিষ্টদের কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

ঘটনার তদন্তের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে সিএনএন- কে বলেছেন, খাসোগিকে কনস্যুলেটের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে তার অডিও-ভিডিও প্রমাণ পাওয়া গেছে। কনস্যুলেটের ভেতরে ধস্তাধস্তি হয়েছে। আঘাত করা হয়েছে। এমনকি তাকে যে মুহূর্তে হত্যা করা হয়েছে তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। সৌদি আরব অবশ্য এসব অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছে। খাসোগির নিখোঁজের সঙ্গে সৌদির কোন সম্পর্ক নেই দাবি করে কনস্যুলেট থেকে বলা হয়েছে, ওইদিন বিকেলেই ওই সাংবাদিক কনস্যুলেট ত্যাগ করেছে।   তবে কনস্যুলেটের বাইরে অবস্থান করা জামাল খাসোগির তুর্কী বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিস বলেছেন, খাসোগি ভেতরে ঢোকার পর থেকে ওই দিন মধ্যরাত পর্যন্ত তিনি সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু খাসোগিকে তিনি কনস্যুলেট থেকে বের হতে দেখেননি।

এদিকে সৌদির দাবির প্রেক্ষিতে জামাল কনস্যুলেট থেকে বের হয়েছে তার প্রমাণ দিতে সৌদি কর্মকর্তাদের তলব করেছে তুরস্ক।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা, যিনি এই অডিও এবং ভিডিও সম্পর্কে জানেন, তিনি ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, "আপনি শুনতে পাবেন লোকজন সেখানে আরবিতে কথা বলছে। তাকে (জামাল খাসোগিকে) জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে এবং পরে খুন করা হচ্ছে। "

তুর্কী কর্তৃপক্ষ অন্য যে মার্কিন কর্মকর্তাকে এই প্রমাণ দেখিয়েছে, তিনি বলছেন এসব রেকর্ডিং থেকে জামাল খাসোগিকে মারধরের প্রমাণ মিলেছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, খাসোগি নিখোঁজ হওয়ার সাথে সাথেই তুরস্ক কেন সৌদি আরবকে দোষারোপ করেছে এসব প্রমাণ থেকে তার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, কিন্তু তুর্কী সরকার এসব অডিও এবং ভিডিও প্রকাশ করতে নারাজ কারণ এতে প্রমাণ হয়ে যাবে যে তুরস্ক একটি বিদেশি দূতাবাসের ভেতরে গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে।

জানা গেছে, খাসোগি শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন হাতিস চেঙ্গিসকে। আর এজন্য তিনি যে পূর্বতন স্ত্রীকে ডিভোর্স (তালাক) দিয়েছেন - এ মর্মে তার একটি প্রত্যায়নপত্র দরকার ছিল। সেটি আনতেই তিনি সৌদি কনস্যুলেটে যান।

সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স