ভয়ে দিন কাটাচ্ছে অযোধ্যার মুসলিমরা

জানুয়ারি মাসে রাম মন্দির উদ্বোধন করা উপলক্ষ্যে হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী অযোধ্যায় আসবেন। তাই নিজের স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন দর্জি শফি মোহাম্মদ। মন্দিরটি শফির জীবনে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, কারণ যেখানে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে সেখানে একসময় একটি মসজিদ ছিলো। মোঘল আমলে নির্মিত সেই বাবরি মসজিদের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেননি শফি। তাই তার হৃদয় আজ ব্যথিত।

ভারতের হিন্দুরা মনে করে যেখানে বাবরি মসজিদ ছিলো সেখানে ভগবান রাম জন্ম নিয়েছিলেন। তাই ১৯৯২ সালে মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয় এবং সেখানে রাম মন্দির নির্মানের প্রক্রিয়া শুরু হয়। মসজিদ ভাঙার এই ঘটনায় সারা ভারতজুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটে এবং এতে প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা যান। নিহতদের মধ্যে শফির চাচাও ছিলেন।

মন্দির থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরত্বে নিজ বাড়িতে সেলাইকাজ করতে করতে শফি বলেন, আমার পরিবারকে ইতোমধ্যে অনেককিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।

উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা শহরে ৩০ লাখ মানুষ বাস করেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৫ লাখই মুসলমান। কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, প্রায় ৫০ হাজার মুসলমান মন্দিরটির আশেপাশে বাস করেন। এসকল মুসলিমরা সর্বদা ভয়ে থাকেন কখন না দাঙ্গা বেঁধে যায়। এদের মধ্যে অনেকেই তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে শহরের বাইরে আত্মীয়দের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন যাতে করে ২২ জানুয়ারি রাম মন্দির উদ্বোধনের দিন কোনো ঘটনা ঘটলে তাদের কোনো ক্ষতি না হয়।

অযোধ্যার একটি মাদ্রাসার প্রধান পারভেজ আহমাদ কাসমি বলেন, ২২ তারিখ কি ঘটবে সেটা ভেবে আমরা সবাই খুব ভয়ে আছি।

তবে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারের আমলে অযোধ্যায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটার ফলে অনেক মুসলমানই খুশি। মন্দিরে দর্শণার্থীদের আগমনের ফলে শহরটির অর্থনীতি সুফল পাবে বলে মনে করেন তারা।

ধারণা করা হচ্ছে রাম মন্দিরের প্রতিষ্ঠা আগামী নির্বাচনে বিজেপির জয়ের পেছনে অবদান রাখবে। রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা ছিলো বিজেপি সরকারের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে চার বছর ধরে চলমান মামলার রায়ে শেষ পর্যন্ত বাবরি মসজিদের জায়গাটিকে হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

স্বয়ং নরেন্দ্র মোদির মন্দিরটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

সূত্রঃ রয়টার্স

news24bd.tv/ab