স্বস্তিতে নেই মন্ত্রীসহ আ. লীগের অনেক হেভিওয়েট নেতা

নৌকা পেয়েও স্বস্তিতে নেই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অন্তত ৩০ হেভিওয়েট নেতা। স্বতন্ত্র চ্যালেঞ্জে মাঠ পর্যায়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। সরেজমিন তথ্য বলছে, ব্যালটের হিসাব নিকাশে কাটা পড়তে পারেন এমন অনেক হেভিওয়েট মুখ। তাইতো ভোটের মাঠের জটিল সমীকরণ মেলাতে শেষ মুহূর্তে তারা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।  

আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী উন্মুক্ত করে দেয়ায় এবার ভোটের মাঠে ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনের নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন সাবেক সংসদ মুরাদ জং। প্রার্থী উন্মুক্ত থাকায় এবার দলের বড় একটা অংশের সমর্থন পাচ্ছেন না নৌকার প্রার্থী। অন্যদিকে ট্রাক প্রতীকের সাইফুল ইসলামও দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে অনেকটা নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছেন বর্তমান এমপি ডা. এনামুর রহমান। তবে তার দাবি এবারও জনগণ উন্নয়নের পক্ষে নৌকা প্রতীকেই ভোট দেবে।

টাঙ্গাইল-৪ আসনে আলোচনায় আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। বিতর্কিত মন্তব্যর কারণে আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পরা সাবেক ৫ বারের সাংসদ আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবার মাঠে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। তার বিপক্ষে নৌকার প্রার্থী হয়ে মাঠে আছেন মাজহারুল ইসলাম তালুকদার। তবে তার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে টাঙ্গাইল-১ আসনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন নৌকার প্রার্থী কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক।

টাঙ্গাইল-৮ আসনে আলোচনায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। আর তার বিপক্ষে মাঠে আছে নৌকা প্রতিকের অনুপম শাহজাহান জয়। তবে তার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এদিকে শরীয়তপুর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের পথের কাটা হয়ে দাঁড়াতে পারেন বঙ্গবন্ধুর সহচর ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি কর্নেল শওকতের ছেলে খালেদ শওকত আলী। খালেদ শওকত শরীয়তপুর-২ আসনে  স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুঁটছেন। নৌকা প্রতীকের জন্য মাথা ব্যথার কারণ এখন খালেদ শওকত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ফরিদপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী কাজী জাফর উল্লাহর বিপক্ষে শক্তভাবে মাঠে আছেন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুঁটছেন গতবারও নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করা মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। এবারও কাজী জাফর উল্লাহকে হারানোর কথা বলছেন নিক্সন চৌধুরী। অন্যদিকে এবার ভোটের মাঠে নৌকাকে হারানো কঠিন হবে বলেই দাবি কাজী জাফর উল্লাহর।

ফরিদপুর-৩ আসনে ঈগল প্রতীক নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুঁটছেন হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী একে আজাদ। তার বিপেক্ষ মাঠে শেষ মুহূর্তে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নৌকা প্রতীকের হেভিওয়েট প্রার্থী শামীম হক। এই আসনেও নৌকার সাথে স্বতন্ত্রের কঠিন যুদ্ধ হবেই বলে মত স্থানীয়দের।

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও চিন্তার ভাঁজ জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী মুজিবুল হক চুন্নুর কপালে। নৌকা প্রতীকে কেউ এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও আওয়ামী লীগের তিনজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। এই তিনজনের একজন মুজিবুল হক চুন্নুর বিজয়ের পথের কাটা হতে পারেন বলে স্থানীয় ভোটার ও নেতাকর্মীদের মত।

মানিকগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান সাংসদ মমতাজ বেগমকে এবার কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশের সমর্থন হারিয়েছেন মমতাজ। তাই এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে নৌকার ভোট চলে গেলে নৌকা প্রতীকের মমতাজের জয় পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও বলছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তবে এসব কথায় পাত্তা দিচ্ছেন না মমতাজ। তার দাবি জনগণ এবারও উন্নয়নের পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে জয়যুক্ত করবে।

নরসিংদী-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের বিজয়ের পথের বাধা হতে পারেন সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল। এই আসনেও কঠিন লড়াই হবে মত স্থানীয়দের।

নারায়ণগঞ্জের ভোটের মাঠ গরম রেখেছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর বিপক্ষে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান ভূঁইয়া ও তৃণমূল বিএনপির তৈমূর আলম খন্দকার। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ভোটারদের ভাষ্য এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের গোলাম দস্তগীর গাজীর জয়ের সম্ভাবনা কম। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়। তবে এর মধ্যে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারেন তৃণমূল বিএনপির তৈমূর আলম খন্দকার।

news24bd.tv/aa