রূপগঞ্জের বিভিন্ন কেন্দ্র দখলে নিয়েছে গাজী সমর্থকরা

<p>এজেন্ট ও ভোটারদের প্রাণনাশের হুমকি</p>

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই বিভিন্ন কেন্দ্র দখলে নিয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থকরা। মারধর করে বের করে দিয়েছে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী শাহজাহান ভূঁইয়ার এজেন্টদের। বিভিন্ন কেন্দ্রের বুথে ঈগল-আলমিরার এজেন্ট সেজে নৌকার পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে অনেককে। চনপাড়ার বিভিন্ন কেন্দ্রে নারী এজেন্টদের শারীরিকভাবে হেনস্তার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এছাড়া রাতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে গাজী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীকে ভোট দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় চনপাড়া আল আমীন মডেল একাডেমি কেন্দ্রে গিয়ে কেটলির কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি। ছিল না সোনালী আঁশের এজেন্টও। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকালে কেটলি প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টরা ভোটকেন্দ্রে আসলে তাদেরকে নৌকার সমর্থকরা বের করে দেয়।

তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের সমর্থক ফাতেমা জানান, সকালবেলায় চনপাড়ার সবগুলো কেন্দ্রে আমি এজেন্ট নিয়ে যাই। কাউকে থাকতে দেয়নি নৌকার সমর্থকরা। নারী এজেন্টদের ওড়না, বোরকা টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে। আমাকে আজ রাতেই গায়েব করে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। পুরুষ এজেন্টদের গতকালই ভোটকেন্দ্রে না আসতে বলেছিল। তবুও যারা এসেছিল তাদেরকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে।

আল আমিন মডেল একাডেমি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মাসুদ রানা বলেন, সকালে কেটলির এজেন্ট দেখেছিলাম। পরে আর দেখিনি। তিনি জানান, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৩৮৯ জন। সকাল ১০টা পর্যন্ত ৫৯৬টি ভোট পড়েছে। সকাল দশটায় কেন্দ্রটিতে নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন থাকলেও পুরুষ ভোটারদের দুটি লাইনই ছিল ফাঁকা।

তারাবো পাট গবেষণা উপকেন্দ্রের ১৯ নম্বর ভোট কেন্দ্রে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর লোকজন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ভোটকেন্দ্রের আশপাশের পুরো এলাকা। অন্য কোনো প্রার্থীর নির্বাচনীকর্মী সমর্থকদের সেভাবে দেখা যায়নি। কেন্দ্রের বাইরে নেই অন্য কোনো প্রার্থীর স্লিপ বিতরণ বুথও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেটলির এজেন্টদের কেন্দ্রে না আসার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে রাতেই। সকালে যারা এসেছিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়। এছাড়া কেটলির ভোটারদের সনাক্ত করতে প্রতিটা কেন্দ্রের বাইরে কিশোর-যুবকদের তৎপরতা দেখা গেছে।

এই কেন্দ্রের কেটলি প্রতীকের এজেন্ট ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘গতরাত থেকে হুমকির উপর রেখেছে গাজীর লোকজন। পারলে তারা আমাকে মেরে ফেলে। মোবাইলে হুমকি দেওয়ায় মোবাইল বন্ধ রেখেছি। এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে তারা। ’

কেটলির আরেক এজেন্ট এলাচি বেগম বলেন, ‘ভয়ের মধ্যে আছি। অনবরত হুমকি দিচ্ছে দস্তগীর গাজীর লোকজন। ’ ওই কেন্দ্রের আটটি বুথে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশিরভাগ বুথে নৌকা ও ঈগলের এজেন্ট রয়েছে।  

এদিকে, ৪ নন্বর বুথে নৌকার এজেন্ট নূর আলম এবং বিউটি নামে দুজনকে দেখা যায়। এছাড়া ঈগল ও আলমিরা প্রতীকের এজেন্ট পরিচয়ে নৌকার জন্য কাজ করছিলেন কয়েকজন। দেখা যায় নূর আলম ও বিউটি পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন কক্ষে আসা-যাওয়া করছেন। এসব বিষয়ে বাধা দিলে কেন্দ্রের দায়িত্বরত এসআই হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তর্কে জড়ান তারা। এর কিছুক্ষণ পরেই নূর আলমের প্রভাব বিস্তার জানতে দায়িত্বরত এক সাংবাদিক এগিয়ে গেলে তাকেও হুঁশিয়ারি করে দেন।

ওই কেন্দ্রের ৮ নম্বর বুথে আলমিরা ও ঈগল প্রতীকের এজেন্ট সেজে ১৬ জনকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে। এসব এজেন্ট নামধারীদের অনেকের কোনো কার্ডও নেই।

এদিকে, নারী ভোটারদের দিয়ে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ মিলেছে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে। কাঞ্চন ভারতচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নারীদের ১নং বুথে দুই জন নারী ভোটারকে একসঙ্গে সিল মারতে দেখা গেছে। এই বুথে নৌকার এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না।

এর আগে, নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯টায় গাজীর সমর্থকরা অন্য প্রার্থীর ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দিলে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে ভোটের চিত্র এমনটা হলেও নীরব ভোটে কেটলি জিতে যেতে পারে বলে অনেক বয়স্ক ভোটারকে আলোচনা করতে শোনা গেছে।