শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দ্বৈত নীতিতে ক্ষতির মুখে বেসরকারি আমদানিকারকরা

অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দ্বৈত নীতির কারণে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ছেন বেসরকারি আমদানিকারকরা। ট্যারিফ ভ্যালুতে মূল্যায়ন করে শুল্কায়ন করায় এনবিআরের কাছে দেনার দায় বাড়ছে বিপিসি ও পেট্রোবাংলার। এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের পাওনা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্য শুল্কায়নে এক দেশে দুই নীতি থাকলে স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ বাধাগ্রস্ত হবে। তাই সবার জন্য এক নীতি অনুসরণের পরামর্শ দেন তারা।   আমদানি করা জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণে দেশে দুই ধরনের পদ্ধতি চালু আছে। প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের মূল্য বিশ্ব বাজারে যাই থাকুক না কেন ৪০ ডলার ট্যারিফ মূল্য ধরে শুল্কায়ন করে থাকে সরকারি প্রতিষ্ঠান-বিপিসি। অন্যদিকে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শুল্কায়ন করে প্রকৃত মূল্যে, যা বর্তমানে ৮৩ ডলারেরও বেশি। সেই হিসাবে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি শুল্ক। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন উদ্যোক্তারা।

পারটেক্স পেট্রোক্যামিক্যালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুবির কুমার ঘোষ বলেন, শুল্কের ক্ষেত্রে সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরের জন্য তো আলাদা নীতি হতে পরে না।  

শুধু তাই নয়, ট্যারিফ ভ্যালুতে মূল্যায়নের কারণে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে পরিশোধিত তেলের দামের পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই পাচার হয়ে যাচ্ছে আমদানি করা তেল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব তেলের গন্তব্য মূলত ভারতের কলকাতা ও মিয়ানমার।  

তথ্য বলছে, কলকাতায় প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৯২ দশমিক ৭৬ রুপিতে। বাংলাদেশি টাকায় যা ১২৩ টাকা। এছাড়া চেন্নাই ও মুম্বাইয়ে লিটার প্রতি ডিজেলের দাম ১২৫ টাকা এবং মিয়ানমারে ১৩১ টাকা। আর বাংলাদেশে ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকায়। দামের এই পার্থক্যের কারণেই বাড়ছে তেল পাচার।

অর্থনীতি বিদ ড. জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা যে এই এক্সপেনসিভ ডলার খরচ করে তেলটা আমাদানি করলাম। এটা যখন আমাদের দেশে থাকছে না, তখন আমাদের রিজার্ভের ওপর আরও বেশি প্রেশার পড়বে।  

গেলো বছরের সেপ্টেম্বর থেকে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালুর শর্ত দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ। তবে এত দিনেও সেই শর্ত পূরণ করেনি সরকার। এর ফলে, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে বিপিসি ও পেট্রোবাংলার বকেয়া জমেছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস এর রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা। সংকট সমাধানে ইনভয়েস ভ্যালুতে মূল্যায়ন করে শুল্কায়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।  

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা যদি কোনো ফরমুলা নিই এবং একীভূত একটা বাজার করতে চাই; তাহলে তো সরকার আমাদানি করুক আর বেসরকারি খাত আমাদানি করুক- ফরমুলাটা এমনভাবে করতে হবে যেন কারও ক্ষতি না হয়। ’ 

বিশ্লেষকরা বলছেন, সয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তেলের দাম নির্ধারণ করা হলে এ খাতে সরকারের ভর্তুকির চাপ যেমন কমবে তেমনি গড়ে উঠবে প্রতিযোগিতামূলক বাজার। তবে খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখার পরামর্শ তাদের। news24bd.tv/আইএএম