লজ্জা শুধু নারীরই নয়, পুরুষেরও ভূষণ

আবু মাসউদ বদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ পূর্ববর্তী নবীদের বাণী থেকে এ কথা জেনেছে যে ‘যখন তোমার লজ্জা নেই তখন তুমি যা ইচ্ছা তা-ই করো। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭৬৯)

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, এই হাদিসের ব্যাখ্যা দুইভাবে করা যায়—এক. কাজ ও তার নির্ধারিত ফলাফল বিষয়ক। অর্থাৎ যার লজ্জা নেই সে যা ইচ্ছা করতে পারে।

দুই. তা সীমা ও অনুমোদন সংক্রান্ত আদেশ।

অর্থাৎ যে কাজ তুমি করতে ইচ্ছা পোষণ করছ, সেদিকে খেয়াল করো, যদি তা লজ্জাজনক না হয় তবে তা করো। আর প্রথম মতটি সঠিক এবং  বেশির ভাগের মত।

লজ্জা কেন নারী-পুরুষ উভয়ের নিদর্শন

বাঙালি সমাজে ‘লজ্জা নারীর ভূষণ’ কথাটি প্রচলিত। ইসলাম নারীকে লজ্জা ও শালীনতার ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিলেও তা নারী ও পুরুষ উভয়ের ভূষণ আখ্যা দিয়েছে।

ইসলামী জীবন বিধানে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য শালীন ও লজ্জাশীল জীবন যাপন করা আবশ্যক। নিম্নে তার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো—

লজ্জা ঈমানের নিদর্শন

ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক আনসারির কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে অপর এক ব্যক্তিকে লজ্জা সম্পর্কে উপদেশ দিচ্ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তাকে ছাড়ো! কেননা লজ্জা ঈমানের অংশ। ’ (আল জামিউ বাইনাস সাহিহাইন, হাদিস : ১২৭৩)

আর ঈমানের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

লজ্জা মানবের ভূষণ

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো কিছুতে অশ্লীলতা তাকে শুধু কলুষিত করে আর কোনো কিছুতে লজ্জা তাকে শুধু সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১২৬৮৯)

এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) নারী ও পুরুষের ভেতর কোনো ধরনের পার্থক্য না করেই তা সাধারণভাবে মানুষের ভূষণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

আরও পড়ুন: মানুষ যেভাবে ভালো কাজের প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হয়

লজ্জা প্রতিপালকের গুণ

মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত লজ্জাশীল ও অন্তরালকারী। তিনি লজ্জা ও অন্তরালে থাকতে পছন্দ করেন। ’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪০১৪)

লজ্জা হলো ইসলামের প্রকৃতি

রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘প্রতিটি ধর্মের একটি বিশেষ স্বভাব আছে। আর ইসলাম ধর্মের বিশেষ স্বভাব হলো লজ্জা। ’ (মুয়াত্তায়ে মালেক, হাদিস : ৩৩৫৯)

এই হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত হয়, লজ্জা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য আবশ্যক।

যেসব ক্ষেত্রে লজ্জা নিন্দনীয়

এক. জ্ঞানান্বেষণে লজ্জা : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) জ্ঞানান্বেষণে লজ্জা না করায় আনসারি নারীদের প্রশংসা করে বলেন, ‘আনসারি মহিলারা কতই না উত্তম! লজ্জা কখনো তাদের ধর্মের বিষয়ে জ্ঞানান্বেষণে বিরত রাখতে পারে না। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৭২)

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘লজ্জাশীল ও অহংকারী ব্যক্তি ইলম অর্জন করতে পারে না। ’ (ইকাজুল ইফহামি ফি শরহি উমদাতুল আহকাম : ৪/৫০)

দুই. সত্য কথা বলা বা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে লজ্জা : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে লজ্জা বোধ করেন না। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৩)

আল্লামা ইবনে হাজর (রহ.) বলেন, ‘এমন কথা বলা যাবে না যে লজ্জাশীলতা ব্যক্তিকে সত্য প্রকাশ করতে অথবা ন্যায় কাজ করতে বাধা দেয়। কেননা তা শরিয়তসম্মত নয়। ’ (কুররাতুল আইন : ১/২০)

আল্লামা ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, লজ্জা একটি প্রশংসনীয় বিষয়। লজ্জা এমন চরিত্র-উদ্দেশ্য, যা অতি সুন্দর কাজ করতে এবং গুনাহর কাজ পরিহার করতে আগ্রহ সৃষ্টি করে। তবে যখন কোনো ব্যক্তির দুর্বলতা ও অক্ষমতা আল্লাহর হক অথবা বান্দার হক আদায়ের মধ্যে সংক্ষেপ করাকে আবশ্যক করে, তখন তা লজ্জার অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা তা হলো দুর্বলতা, শক্তিহীনতা, অপারগতা ও লাঞ্ছনা। ’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ২১/৬)

লেখক : মো. আবদুল মজিদ মোল্লা

news24bd.tv/DHL