ধর্ষণ মামলা

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি যুবক গ্রেপ্তারের পর জামিন

ধর্ষণের মামলায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশি যুবক লুৎফর রহমান হিমু (৩১) -কে ১ ডিসেম্বর পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ১৩ জানুয়ারি কুৃইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে হাজিরার তারিখ দিয়ে হিমুকে আদালত ২ ডিসেম্বর জামিন (সুপারভাইজ রিলিজ) প্রদান করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিস্ট্রিক্ট এটর্নির কমিউনিকেশন্স ডাইরেক্টর ইকিমুলিসা লিভিঙ্স্টন এ তথ্য জানান।

উল্লেখ্য, হিমু নবগঠিত পেনসিলভেনিয়া স্টেট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং তিনি ফিলাডেলফিয়ায় বসবাস করেন।

মামলার বিবরণে প্রকাশ, কুইন্সে ১৪৪-১৫ লিবার্টি এভিনিউতে অবস্থিত কমফোর্ট ইন হোটেলে ডিসেম্বরের ১ তারিখ ভোর রাত পৌনে ২টা থেকে ২টার মধ্যে (২ সন্তানের মা) ৩৪ বছর বয়েসী এক নারীকে ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।  

জানা গেছে, এই নারী কুইন্সে অবস্থিত একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। এই ঘটনায় হিমুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। জানা গেছে, এই নারী হিমুর গার্লফ্রেন্ড। তার সাথে বসবাসের জন্য ফিলাডেলফিয়া থেকে ২৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে এসে এই হোটেলে রুম ভাড়া করেছেন হিমু। মামলার এ অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে হিমু বলেন, সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।  

তার সাথে আমার সম্পর্কের কথা ওর পরিবারের সকলেই জানেন। তার দুটি সন্তানের সাথেও আমার সুন্দর সম্পর্ক। কয়েক মাস আগে সে আমার সাথে জাতিসংঘে গেছে। এরও আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়ে গেছি। ফিলাডেলফিয়ায় আমার বাসায়ও গেছে। সে ব্যাংকে চাকরি করলেও মাঝেমধ্যেই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেন অথবা অর্গানাইজারের দায়িত্ব পালন করেন। আমি ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে তার সাথে মধুর সম্পর্ক রচিত হয়েছে।

মামলা প্রসঙ্গে হিমু বলেন, ঐদিন রাত ২টার সময় আরো দু’জনের সাথে একটি গাড়িতে আমার হোটেলে (কমফোর্ট ইন) আসে। সম্পূর্ণ মাতাল থাকায় আমি অপর দু’জনকে অনুরোধ করি তাকে বাসায় নিয়ে যেতে। কিন্তু ওরা তা শোনেনি। এমনি অবস্থায় সে হোটেলে আমার কক্ষে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে আমিও অসুস্থবোধ করলে গাড়িতে করে ওকে তার বাসায় স্বামী-সন্তানের কাছে দিয়ে এসেছি। পরদিন সন্ধ্যায় সে পুনরায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে হোটেলে এসেছিল। সবকিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও কেন সে পুলিশে এমন জঘন্য মিথ্যা অভিযোগ করেছে তা বুঝতে পারছি না। হোটেলের সিসিটিভি পরীক্ষা করলেই সবকিছু পানির মতো পরিষ্কার হবে।

এদিকে, অভিযোগকারি ওই নারীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, হিমু এতটাই মাতাল ছিলেন যে, প্রেমিকার সাথে আচরণের শালীনতা ছাড়িয়ে যান এবং ধর্ষণের পাশাপাশি অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছেন। আরো জানা গেছে, স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর্যায়ে থাকায় হিমু তার কথিত বেস্ট ফ্রেন্ডকে বিয়ের অঙ্গীকার করেন। এমনকি কোন কোন স্থানে তাকে স্ত্রী হিসেবেও পরিচয় দিয়েছেন।

এদিকে, পেনসিলভেনিয়া স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরপ্রতিক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার এ সংবাদদাতাকে জানান, হিমু কখনোই আওয়ামী লীগ কিংবা যুবলীগের কর্মী-সংগঠক ছিলেন না। তাকে আমরা সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দিতে বাধ্য হয়েছি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নির্দেশে।

এ প্রসঙ্গে পেনসিলভেনিয়া স্টেট আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আলিমউদ্দিন আরো জানান, বছরখানেক আগে সিদ্দিকুর রহমানের সাথে সম্পর্ক তৈরী করে হিমু আওয়ামী লীগে ঢুকেছেন। সে সময় থেকেই আমি প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। কারণ, খুলনার বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার লুৎফর রহমান হিমু ২০১৩ সালে স্টুন্ডে ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে দৌলতপুর বিএল কলেজ ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। ফেসবুকে আমি এ নিয়ে অনেক তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতির বোধোদয় হয়নি। এখন ব্যক্তি হিমুর জঘন্য আচরণের দায় নিতে হচ্ছে দলগতভাবে আওয়ামী লীগকে।

নারী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারের তথ্য জানাজানি হবার পর ফিলাডেলফিয়া অঞ্চলের অনেক যুবক অভিযোগ করেছেন যে, তারাও হিমু কর্তৃক প্রতারিত হয়েছেন। জানা গেছে, ‘ব্রিটস গ্লোবাল ফাউন্ডেশন’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিমু জাতিসংঘের কনফারেন্স ছাড়াও নানা জায়গায় যাতায়াত করেন। এছাড়াও ফিলাডেলফিয়ায় একটি স্টোর ভাড়া নিয়ে গার্মেন্টসের ব্যবসার সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। যদিও কখনোই সে ব্যবসা চালু হয়নি।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শনিবার ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় রবিবার সকাল) পেনসিলভেনিয়া স্টেট আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে হিমু প্রসঙ্গ উত্থাপিত হবে।

সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের এ সংবাদদাতাকে জানান, স্বেচ্ছায় সে পদত্যাগ না করলে আমরা তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেব।   অভিযোগ সম্পর্কে সিদ্দিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, হিমু পেনসিলভেনিয়া স্টেট কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। সেটি ওই স্টেটের কর্মকর্তাগণের ব্যাপার।

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল