খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় বৃহস্পতিবার

আদালতে নিরাপত্তা জোরদার, পথে পথে তল্লাশি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে নিরাপত্তার চাঁদরে ঘিরে ফেলা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট আদালত এলাকা। পোশাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে তৎপর রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে তল্লাশির পাশাপাশি মহাসড়কে কড়া নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।   

বৃহস্পতিবার রায় বিপক্ষে গেলে বিএনপি সমর্থকরা ঢাকায় জড়ো হয়ে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশির পাশাপাশি রাজধানীতে নিরাপত্তা চৌকির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।  একইসঙ্গে ৮ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে লাঠি, ছুরি বা যে কোন ধারালো অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ও দাহ্য পদার্থ বহন নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

চট্টগ্রামের পুলিশও একই ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বন্দরনগরীতে সব ধরনের দেশীয় অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রামের সিমেন্ট ক্রসিং থেকে পতেঙ্গার ১১ নম্বর ঘাট পর্যন্ত সড়কে বুধবার বিকাল ৪টা থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর ও  নরায়ণগঞ্জেও যানবাহনে চালানো হচ্ছে তল্লাশি। টাঙ্গাইল, গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ রোড হয়ে রাজধানীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথ উত্তরা। সেখানেও কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ গাবতলী এলাকায়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে। সন্দেহ হলেই তল্লাশি করা হচ্ছে।

এদিকে রায় ঘোষণার আগের দিন বুধবার বকশীবাজারে মহানগর দায়রা জজ আদালতে গিয়ে র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা চোখে পড়ে। তারা ঘনঘন টহল দিচ্ছেন এবং সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করছেন। র‌্যাব সদস্যরা ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে অস্থায়ী এই আদালতের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে সিসি ক্যামেরা লাগাচ্ছেন।  গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যদেরও পৃথকভাবে সিসি ক্যামেরা লাগাতে দেখা যায়।

ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে বৃহস্পতিবার জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার তারিখ রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে।

বিএনপির অভিযোগ, সরকার বিএনপি নেত্রীকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই ‘মিথ্যা’ এই মামলাকে রায় পর্যন্ত টেনে এনেছে। রায় বিপক্ষে  গেলে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, এই মামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। রায়কে কেন্দ্র করে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তা কঠোর হাতে দমন করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।  

এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে দুই প্রধান দলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে সাধারণ মানুষের মনে। উৎকণ্ঠা কাজ করছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মধ্যেও। তারা বলছেন, রাস্তায় ঝামেলা হলে যানবাহনেরই ক্ষতি হয় বেশি। অনেক সময় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। রাজনৈতিক সহিংসতায় এ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অনেক চালক-হেলপার প্রাণ হারিয়েছেন। ফলে বৃহস্পতিবার গাড়ি বের করবেন কিনা তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।

এদিকে রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোতে আবাসিক হোটেল, বোর্ডিং হাউস আর মেস বাড়িগুলোর দিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। নজরদারিতে রাখা হয়েছে ফেসবুক, ট্যুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও।