‘নারীকে বিবস্ত্র করার ঘটনা বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে বিবস্ত্র করেছে’

নোয়াখালীতে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা গোটা বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে বিবস্ত্র করে দিয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসীরা স্বামীকে বেঁধে রেখে এই অসহায় নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছে, ধর্ষণের চেষ্টা করেছে এবং দম্ভের সাথে এই জঘন্যতম অপরাধের ভিডিও ধারন করেছে। একই সাথে এই সন্ত্রাসীরা নির্যাতিতার বাবাকে হুমকি দিয়েছে যদি এর জন্য আইনের আশ্রয় চাওয়া হয়, তাহলে তারা এই ভিডিও ফেসবুক ও নানা সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে। কিন্তু এই সন্ত্রাসীরা কথা রাখেনি।

তারা সেই বীভৎস অপরাধ কর্মের ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে। যা মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে নির্যাতিতা নারী ও তাঁর পরিবারকে সামাজিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মহামান্য হাইকোর্টকে ধন্যবাদ যে, এই বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মাননীয় বিচারপতি মো. মজিবর রহমান মিয়া এবং মাননীয় বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীম দ্রুততার সাথে নির্দেশ জারি করে ইন্টারনেট থেকে এই জঘন্য অপরাধের ভিডিও সরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

এর ফলে অন্তত নির্যাতিতা নারী ও তাঁর পরিবারের বিবস্ত্র হবার চিত্র বার বার জনসমক্ষে প্রচারিত হবে না। কিন্তু নোয়াখালিতে এই জঘন্য ঘটনার ফলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে বিবস্ত্র দশা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা দুনিয়ায় প্রচারিত হলো তার কি প্রতিকার হবে?

বাংলাদেশে প্রচলিত ‘ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’ এর ৯ এবং ১০ ধারার আওতায় নোয়াখালীর এই দুর্বৃত্তরা অভিযুক্ত হবে। ইন্টারনেটে নারী নির্যাতনের ভিডিও প্রচারের কারণে এই অপরাধী চক্র হয়তোবা ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬’ এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ এর আওতায় অভিযুক্ত হবে এবং অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হলে শাস্তি পেতে পারে।

আরও পড়ুন: দিনের পর দিন ধর্ষিত নারীর প্লাকার্ডে লেখা, ‘ইজ্জতহানীর বিচার চাই’

এখানে প্রশ্ন হলো, এই দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে নির্যাতিতা নারী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা কতোটুকু থাকবে? নির্যাতিতা নারীর বাবা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরকে বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ‘প্রভাবশালী হওয়ায়’ এতদিন ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস হয়নি তাদের।

আরও পড়ুন: নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, নির্যাতনকারীদের বাবা ডেকেও হয়নি কাজ

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এই নির্যাতক-সন্ত্রাসীরা এতোটাই প্রভাবশালী যে নির্যাতিতরা এদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করতে সাহস পায় না! দেশে আইনের শাসন কায়েম করতে হলে আমাদেরকে জানতে হবে অপরাধীদের এই প্রভাবের শেকড়টি কোথায়? এর সঙ্গে অসৎ রাজনীতি এবং আমলাতন্ত্রের কোনো যোগ আছে কিনা? এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো। সেটি হলো, অপরাধীরা প্রায় সবাই বয়সে বেশ তরুণ। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে এই তরুণদের বিপথগামী করল কারা? 

আমাদের বুঝতে হবে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এখন আর শুধু দেশীয় বিষয় নয়। এটি এখন বৈশ্বিক এজেন্ডা। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বিশ্বব্যাপী নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে জোরাল পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও এখনও ফেসবুক ও ইউটিউবে

জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলকরণে কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু নোয়াখালীর এই নারী নির্যাতনের ঘটনা আবারো প্রমাণ করল, জাতিসংঘের আহবান থেকে বাংলাদেশ বহু যোজন দূরে অবস্থান করছে।

হাসান তারিক চৌধুরী: সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। রাজনীতিবিদ। সম্পাদক, বিশ্ব গণতান্ত্রিক আইনজীবী পরিষদ।

news24bd.tv তৌহিদ