খবর পার্সটুডের

শরণার্থী ফেরত নয়, রাখাইনে বৌদ্ধ স্থানান্তরের পরিকল্পনা মিয়ানমারের!

বাংলাদেশে অবস্থানরত বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা অঞ্চলে স্থানান্তরের অনুমতি দিয়েছেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। রাখাইন প্রদেশের স্থানীয় সরকার ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য রোহিঙ্গা মুসলমানদের জায়গা জমি অধিগ্রহণ করেছে।  

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের ফিরিয়ে নেয়ার কোনো ইচ্ছাই মিয়ানমার সরকারের নেই। তাদের মতে, বাংলাদেশের বৌদ্ধদেরকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসতবাড়িতে স্থানান্তরের পরিকল্পনা মিয়ানমারের নতুন ষড়যন্ত্র যা কিনা রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়া সংক্রান্ত চুক্তির লঙ্ঘন। বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান অবস্থান করছে।

প্রায় চার মাস আগে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ে চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করেনি। সূত্রমতে, বাংলাদেশের বৌদ্ধদেরকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে মিয়ানমার। আর এ থেকে বোঝা যায় রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। তারা চায় ওই অঞ্চলের জনসংখ্যার কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে।  

২০১৬ সালের শেষের দিকে জনসংখ্যার কাঠামোয় পরিবর্তন আনার কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। সেসময় দেশটির কর্মকর্তারা ঘোষণা করেছিলেন, রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধদের জন্য নতুন সাতটি গ্রাম নির্মাণ করে দেওয়া হবে। ওই ঘোষণার দেড় বছর পর রাখাইন অঞ্চলে মুসলমানদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হত্যা, নির্যাতনের মাধ্যমে তাড়িয়ে দেওয়া হয় প্রায় সব রোহিঙ্গা মুসলিমকে। এ থেকেই মিয়ানমারের সেনা ও উগ্র বৌদ্ধদের মুসলিম বিতাড়নের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, জনসংখ্যার কাঠামোয় পরিবর্তন আনার যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ, সেটা বাস্তবায়ন করতেই ওই হামলা চালানো হয়। আর দুই দেশের মধ্যে চুক্তির কয়েক মাস পার হয়ে গেলেও প্রত্যাবাসন শুরু না করায় সেটাই এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

২০১৪ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মংডু এলাকায় মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র দুই শতাংশ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এবং অবশিষ্ট সবাই মুসলমান। এ কারণে গত দুই বছর ধরে উগ্র বৌদ্ধরা এমনভাবে মুসলমানদের ওপর নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে যাতে পালিয়ে যাওয়া মুসলমানরা দেশে ফিরে আসার কথা চিন্তাও করতে না পারে।

মানবাধিকার সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মিয়ানমারের সেনা ও উগ্র বৌদ্ধদের অপরাধযজ্ঞকে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান হিসেবে উল্লেখ করেছে। ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ক গবেষক অ্যন্থেনিও কারতালুচি বলেছেন, "জাতিগত শুদ্ধি অভিযান বলতে যা বোঝায় তা মিয়ানমারের রাখাইনে ঘটছে। " 

মিয়ানমারে বৌদ্ধদের পক্ষে জনসংখ্যার কাঠামোয় পরিবর্তন আনার জন্য এমন সময় চেষ্টা চলছে যখন মানবাধিকারের দাবিদার পাশ্চাত্যের দেশগুলো রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। এই নীরবতা মুসলিম গণহত্যা চালাতে মিয়ানমার সরকারকে আরো উৎসাহিত করেছে।