জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কলে ডুবে যাওয়া নৌযান থেকে এক শ্রমিকের ফোন কলে মেঘনা নদীর চর রামদাসপুরে একটি ডুবো চর থেকে চার শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করেছে ভোলার পূর্ব ইলিশা সদর নৌ থানার নৌ পুলিশ।
শনিবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে নয়টায় নিয়াজ (৪০) নামে একজন কলার ৯৯৯ এ ফোন করে জানান তারা চারজন শ্রমিক সিমেন্ট বোঝাই একটি নৌযান (বাল্কহেড) নিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ছিলেন সকাল সাড়ে এগারোটায়। দুপুর আড়াইটায় তারা চাঁদপুর পৌঁছান।
এরপর চাঁদপুর থেকে রওনা দেয়ার প্রায় দুইঘন্টা পর তারা ঝড়ের কবলে পড়েন। এরপর শুরু হয় তাদের জীবন মরণ যুদ্ধ। তীব্র স্রোত আর ঝড়ো হাওয়ায় তারা নৌযানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন, তারা প্রাণপণ চেষ্টা করেও নৌযান নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি।
এরপর তারা নিজেদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেন, বাতাস আর নদীর স্রোতের অনুকূলে তারা তাদের নৌযানটি রাখার চেষ্টা করেন, কারণ স্রোত আর বাতাসের প্রতিকূলে চলার চেষ্টা করলেই তাদের নৌযান ডুবে যাবে। এরপর ঝড় আর নদীর স্রোত তাদের কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেছে তার কিছুই তারা বুঝতে পারেননি। এক পর্যায়ে রাত নয়টার দিকে একটি ডুব চরে আটকে তাদের নৌযানটি নিমজ্জিত হয়।
তবে নৌযানটির একটি অংশ, যেখান থেকে নৌযান পরিচালনা করা হয় তার কিছু অংশ এখনো ভেসে আছে। তারা চারজন শ্রমিক কোনোমতে সেখানে বসে আছেন। এরপর তারা তাদের উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করলে তাদেরকে ৯৯৯ এ ফোন করার পরামর্শ দেয়া হয়।
৯৯৯ এর জন্য অনেক বড় একটি চ্যলেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় কলারের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করা। কারণ কলার তার অবস্থান জানাতে পারেননি। শুধু বলেছিলেন চাঁদপুর থেকে রওনা দেয়ার দুই আড়াইঘন্টা পর ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন। সঠিক অবস্থান না জেনে বিশাল মেঘনা নদীতে উদ্ধার অভিযানে যাওয়া দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু কোন কিছু না করে নিশ্চুপ বসে থাকা ৯৯৯ এর পক্ষে সম্ভব নয়।
৯৯৯ প্রথমে চাঁদপুর নৌপুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বিষয়টি জানিয়ে কলারের সাথে কথা বলিয়ে দেয়। কলারের বর্ণনা অনুযায়ী চাঁদপুর থেকে জানানো হয় ঘটনাস্থল বরিশাল হিজলার কাছাকাছি মেঘনা নদীতে হতে পারে। এরপর ৯৯৯ বরিশাল নৌ পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বিষয়টি জানায়।
মোদিবিরোধী মিছিল হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা: মনিরুল
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ইসলামী ব্যাংক
ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে সাহায্যের আশ্বাস স্পেনের রাষ্ট্রদূতের
রাজনীতি ভুলে বিএনপি ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে: ওবায়দুল কাদের
বরিশাল নৌ পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ঝালকাঠি গামী নৌযান গুলোর নদী পথের একটি ধারণা পাওয়া যায়। বরিশাল নৌ পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে হিজলা নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও কালিগঞ্জ নৌ পুলিশ ফাঁড়িকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর হিজলা নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও কালিগঞ্জ নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ৯৯৯ কে জানায় কলার ও তার সঙ্গীরা তাদের এলাকায় নেই।
এরপর ভোলার পূর্ব ইলিশা নৌ পুলিশ ফাঁড়িকে জানানো হয় ভোর রাত তিনটায়। সংবাদ পেয়ে ভোর চারটার একটু আগে পূর্ব ইলিশা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির একটি উদ্ধারকারী দল রওনা দেয় এবং কলারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে থাকে এবং সার্চ লাইটের আলো ফেলতে ফেলতে এগোতে থাকে। অবশেষে ১৪ মার্চ রোববার ভোর ছয়টার দিকে পূর্ব ইলিশা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উদ্ধারকারী দল কলার ও তার ৩ সঙ্গীকে খুঁজে পায়।
পূর্ব ইলিশা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এ এস আই শরিফুল ৯৯৯ কে জানান ঘটনাস্থল মেঘনা নদীর চর রামদাসপুর, তাদের ফাঁড়ি থেকে নৌপথে ৭/৮ কিমি দূরত্বে অবস্থিত। তারা চার শ্রমিককে উদ্ধার করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন তাদের প্রাথমিক শুশ্রূষা ও খাবারের ব্যবস্থা করেন এবং মোবাইল ফোন চার্জের ব্যবস্থা করেন। ইতিমধ্যে ৯৯৯ থেকে সংবাদ পেয়ে কোষ্টগার্ডের একটি উদ্ধারকারী দলও ঘটনাস্থলে হাজির হয়।
৯৯৯ এর হার না মানা প্রচেষ্টায় জীবিত উদ্ধার হলো চার শ্রমিক।
news24bd.tv / কামরুল