পাহাড়ে জলোৎসবে মেতেছে মারমা তরুণ-তরুণীরা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বৈসাবি ও বর্ষবরণ উৎসব শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাইং উৎসব। মারমা ভাষায় এ উৎসবকে বলা হয় ‘রিলংপোয়ে’। পুরনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করতে জলোৎসবের আয়োজন করে মারমা সম্প্রদায়। জলখেলার জন্য এরা আগে থেকে প্যান্ডেল তৈরি করে। ওই প্যান্ডেলে মারমা যুবক-যুবতীরা একে অপরকে জল ছিটিয়ে কাবু করার প্রতিযোগিতায় শামিল হয়। এ সময় কৃত্রিম ভারি বর্ষণ হয় অনুষ্ঠানস্থল জুড়ে। উৎসবের আনন্দ জলে সিক্ত হয় মারমা তরুণ-তরুণীরা। আনন্দ-উল্লাসে নেচে-গেয়ে পার করে দিন।
আজ দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে মং (ধর্মীয় ঘণ্টা) বাজিয়ে রাঙামাটি জেলা শহরের আসামবস্তি নারকেল বাগানে আয়োজিত দিনব্যাপী জলোৎসবের উদ্বোধন করেন সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার।
এতে সভাপতিত্ব করেন মারমা সংস্কৃতি সংস্থার সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য অংসুই প্রু চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংগ্রাই উদযাপন কমিটি-২০১৮’এর আহবায়ক মংউচিং মারমা।
ঘণ্টা বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই পানি ছিটিয়ে জল উৎসবের সূচনা করেন, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার। এতে মারমা তরুণ-তরুণীরা মেতে ওঠেন সাংগ্রাই জল উৎসবে। পরিবেশিত হয় বাংলাসহ পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির নৃত্যসঙ্গীত।
উৎসব পরিণত হয় সম্প্রীতির মিলন মেলায়। উৎসবে মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি ছাড়াও পরিবেশিত হয় আবহমান বাংলার নৃত্যসঙ্গীতসহ বৈচিত্র্যপূর্ণ পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর নান্দনিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মাতে পাহাড়ি বাঙালি।
মারমা সম্প্রদায় ছাড়াও উৎসবে যোগ দেয় চাকমা, ত্রিপুরা, খিয়াং, গুর্খা, অহমিয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, উসুই, লুসাই, চাক, রাখাইন, খুমি, বমসহ বাঙালি জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার নারী-পুরুষ। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষ সমবেত হয় উৎসবস্থলে। পার্বত্য তিন জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পদচারণায় উৎসবের নগরীতে পরিণত হয় পুরো রাঙামাটি শহর।
সকাল থেকে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ চট্টগ্রাম থেকেও মানুষের ঢল নামতে শুরু করে জলোৎসবস্থলে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসমুদ্রে পরিণত হয় নারিকেল বাগান এলাকা। পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলনমেলায় জমে উঠে সাংগ্রাইং উৎসব।
এ ব্যাপারে সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার পাহাড়িদের আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সবক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানকার মানুষের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। যে কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেছেন। কিন্তু কিছু মহল নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলে সরকারের চলমান উন্নয়ন ও শান্তি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো বৈসাবিকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করে। যেমন: চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু, মারমারা সাংগ্রাইং নামে পালন করে থাকে। মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে জল ছিটিয়ে পুরনো বছরের সব গ্লানি, দুঃখ, বেদনা ও অপশক্তিকে দূর করে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। মুমু/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর