ঈদের আনন্দ নেই ফেরিতে মাকে হারানো সেই রিফাতের পরিবারে

নতুন পোশাক আর রঙিন স্বপ্ন নিয়ে মা’কে নিয়ে ছোট বোনের সাথে ঈদ করতে নারায়ণগঞ্জ থেকে মাদারীপুরের গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন কিশোর রিফাত। কিন্তু মর্মান্তিক নির্মম দুর্ঘটনায় রিফাতের সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেলো। মায়ের কোলে আর উঠতে পারবেন না রিফাতের ছোট বোন ৭ বছর বয়সী আজমীরা। যেখানে থাকার কথা উৎসব আর আনন্দ আজ সেখানেই চলছে শোকের মাতম। রিফাতের দাদা ও নানী বাড়ি একই গ্রামে হওয়ায় দুই বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

বুধবার দুপুরে ফেরিতে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে পরকালে পাড়ি জমিয়েছেন মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার বালিগ্রামের নিপা বেগম নামে এক গৃহবধূসহ পাঁচজন। ফেরি দুর্ঘটনায় নিহত সবার পরিবারেই এখন বইছে শোকের মাতম।

রিফাতের চাচা উজ্জল বেপরাী জানান, কয়েক হাজার যাত্রীর সাথে ফেরিতে উঠে রিফাত ও তার মা। মুন্সীগঞ্জ জেলার শিমুলিয়া ঘাটে ফেরিতে উঠার পর সেখানে ৭টি যানবাহন ছিল। যানবাহন বের করতে গিয়ে সাধারণ যাত্রীরা চাপে মুখের পড়ে। পরবর্তীতে যানবাহন রেখে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফেরি ডালা তুলতে বাধ্য হন ফেরি কর্তৃপক্ষ। এসময় ফেরিতে অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় এবং প্রচণ্ড গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফেরি বাংলাবাজার ঘাটের কাছে পৌছালে রিফাতের মা অসুস্থ বোধ করে। তখন মায়ের জন্য কয়েক দফা পানি আনে রিফাত। এ সময় তিনটি শিশু ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলে তাদের কাধে করে রক্ষা করে ছোট্ট রিফাত। এমনকি একজন বৃদ্ধ ব্যক্তিসহ কয়েকজনকে পানি দিয়ে জীবন বাঁচায় রিফাত। কিন্তু নিজের মায়ের শেষ করুণ পরিণতিটা রুখতে পারেনি সে। চিরদিনের জন্য মাকে হারিয়ে ফেলে রিফাত।   রিফাত বলেন, আমি পানি পান করিয়ে অনেকের জীবন বাঁচাইছি। অথচ আমার মাকেই বাঁচাতে পারলাম না। মাকে নিয়ে ঈদের আনন্দ করতে আসছিলাম কিন্তু মা তো এখন আর নেই।

বাংলাবাজর ঘাট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুরে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের পদ্মা নদীতে একটি রোরো ফেরিতে আসছিল কয়েক হাজার যাত্রী। ফেরির যানবাহন রাখার খোলা জায়গায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রখর রোদের তাপে ফেরি যখন বাংলাবাজার ঘাটের কাছাকাছি আসে তখনই অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করে যাত্রীরা। পানি পিপাসা আর গরমে ঘটনাস্থালেই মারা যায় ৫ জন।  

নিহতরা হলেন পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আরামকাঠি এলাকার আবদুল জব্বারের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৭) ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার পদ্মবিলা এলাকার মজিবর রহমানের স্ত্রী শিল্পী বেগম (৪০)। বরিশালের মুলাদি থানার নুরুদ্দিন আকন(৪৫), শরীয়তপুরের নরীয়া থানার আনছুর আলি (১৫) এবং মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার নিপা বেগম।

নারায়ণগঞ্জে নিজে স’মিলে ও স্ত্রী গার্মেন্টেসে কাজ করতো। এখন কিভাবে সন্তানদের লালন-পালন করবেন সেই ভাবনায় দিশেহারা রিফাতের পিতা আল আমিন বেপারী। আল আমিন বেপারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, উনাকে (নিহত নিপা) বলেছিলাম তুমি গরম সহ্য করতে পারো না। তোমার বাড়ি যাওয়ার দরকার নাই। তবুও গেছে। এখন আমাদের ঈদের আনন্দ নেই। ছোট ছোট বাচ্চা রেখে গেছে। এখন ওদের নিয়ে কিভাবে বাঁচবো?

আরও পড়ুন

বগুড়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

স্বাস্থ্যবিধি মেনে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপনের আহ্বান ওবায়দুল কাদেরের

লকডাউন প্রত্যাহারের পর ঢাকায় ফিরুন: তাপস

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৩

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, ফেরিতে দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচজনের লাশ শনাক্ত করে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আগামীতে পুলিশ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিবে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

news24bd.tv আহমেদ