বাজেট ও ফ্রিজের গল্প

আজ মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহান জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করলেন। আমার ছোটবেলায় বাবা বাজেটের পরদিন পত্রিকা নিয়ে বসতেন। পত্রিকার নাম ভোরের কাগজ। ভোরের কাগজে আবেদ খান ও পরে মতিউর রহমান সম্পাদক ছিলেন। বাজেটের পরদিন বাজেট ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হতো!

কী কী পণ্যের দাম বাড়ল ও কী কী পণ্যের দাম কমল তা বাবা বারবার বলতেন। আমি তখন এতকিছু বুঝতাম না! এখন কিছু বুঝি তবে তাও পর্যাপ্ত নয়।

১৯৯৬ সালের বাজেট। উপস্থাপন করেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ। বাজেট ঘোষণার দিন বাবা অফিস থেকে তিনটায় বাসায় চলে আসেন। আম্মাকে বলেন "বাজেটে দাম বেড়ে যেতে পারে! একটা ফ্রিজ কিনে ফেলি!"

তখন ফ্রিজ কেনাটা আমাদের জন্য অর্থনীতির ভাষায় প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাব নয়, বিলাসজাত দ্রব্যের অভাব! আম্মা রাজি ছিলেন না। বাবা ঝোঁকের বসে ফ্রিজ কিনলেন। সিঙ্গার ফ্রিজ। দাম ছাব্বিশ হাজার টাকা! 

ফ্রিজ কেনার পরদিন আমাদের পাশের বাসার আন্টি আংকেলকে দিয়ে অনেক বাজার করায় আমাদের ফ্রিজে রাখবে বলে! বাজেট উপস্থাপন করে বৃহস্পতিবার। পরদিন শুক্রবার। আন্টি বাসায় এসে বলে ফ্রিজে মাছ মাংস রাখবে। আম্মা বলে ফ্রিজ সেট করা হয়নি। শুক্রবার বলে মিস্ত্রি নাই! এখনকার মত তখন শোরুম থেকে লোক এসে সব সেট করে দিত না!

বাবা আন্টির অবস্থা দেখে লজ্জায় পড়ে গেলেন। বন্ধের দিনে মিস্ত্রি খুঁজতে লাগলেন। মিস্ত্রি এনে ফ্রিজ সেট করে আন্টির রাখা মাছ মাংস দিয়ে আমাদের সিঙ্গার ফ্রিজ যাত্রা শুরু করল।

আম্মা এ ফ্রিজ কেনার এক দশক পর থেকে একটা ডিপ ফ্রিজ কেনার কথা বলতো। নরমাল ফ্রিজের ডিপ সেকশন ছোট। এ নিয়ে আম্মার অনুযোগ ছিল। বাবা কিনবে কিনবে করেও ডিপ ফ্রিজ কিনেছিলেন না।  

আমি ২০১৩ সালের জুনে ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটিতে চাকুরিজীবন শুরু করি। চাকুরি পাওয়ার পর টাকা জমিয়ে প্রথম বাসার জন্য একটা ডিপ ফ্রিজ কিনি। ওয়াল্টনের সবচেয়ে বড় সাইজ ডিপ ফ্রিজ।   আম্মাকে সারপ্রাইজ দিই! 

বাবার কেনা ফ্রিজটা এখনো আছে। এ ফ্রিজ কেনার সময় আমরা দুই ভাইবোন ছিলাম। ফ্রিজ কেনার পর জন্ম নেয়া ছোটবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আপু আর আমিতো বিয়ে শাদি করে বুড়োই হয়ে গেলাম!

বহুবার পুরনো ফ্রিজ বদলে নতুন ফ্রিজ নিতে চেয়েছি। আম্মা বলে না! আমার আগেরটাই ঠিক আছে।  

আজ নোয়াখালী থেকে এসে ফ্রিজটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ। কোণায় কোণায় মরিচা জমেছে। মরিচা পড়েছে বাজেটের পরদিন পত্রিকার ক্রোড়পত্র পড়ার অভ্যাসে শুধু মরিচা পড়েনি আমাদের চড়াই উৎরাইয়ের স্মৃতিতে।

লেখা কাজী শরীফ ( ফেসবুক থেকে নেয়া)

news24bd.tv/আলী