১৩ থেকে ১৭ এর মধ্যে ৫০ শতাংশ যুবকরা সিগারেটও খায়

কোভিড বাংলাদেশে আসার পর ২০২০ সালের মার্চ মাসের ২০ তারিখ থেকে দেশের স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি সব বন্ধ রয়েছে। তারপর ঢাকা ছেড়ে এখন পর্যন্ত গ্রামেই আছি। তো গ্রামে আসার পরে বিকালে সাধারণত ফুটবল, ভলিবল খেলতাম। তখন এলাকার যুবকরাও ফুটবল এবং আরও অনেক শারীরিক খেলা খেলত। এদের বেশিরভাগের বয়সই ১৩ থেকে ১৭ এর মধ্যে। কিন্তু  দুই এক মাস পর দেখলাম মাঠে খেলার মতো বেশি পোলাপান আর হয় না।  

তারা মাঠের খেলা বাদ দিয়ে মোবাইল গেমের প্রতিই বেশি আসক্ত হয়ে গিয়েছে। আগে যাদের খেলায় জোর করেও বাদ দেওয়া যেত না তাদেরকে এখন জোর করেও মাঠে নামানো যায় না। তারা বেশিরভাগই 'ফ্রি ফায়ার' 'পাবজি'  নামক গেমের প্রতি আসক্ত। প্রথমদিকে দেখতাম দুই একজন খেলত আর তার আশেপাশে ভীর করে কয়েকজন খেলা দেখতো।  

আরও পড়ুন:

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু-শনাক্ত বাড়ল লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা তিন সংসদীয় শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন পাকিস্তানি সিরিয়ালে বাংলা ভাষার গান ভাইরাল (ভিডিও)

তার দুই এক মাসের মধ্যে দেখি চিত্র একদম পাল্টে গিয়েছে। এখন ঐ পোলাপানের মধ্যে ৯৫% গেম খেলে এবং সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। বিকালে মাঠে গেলে এখন একটা চিত্র কমন হয়ে গেছে মাঠের পাশে লাইন ধরে তারা গেম খেলায় মশগুল। তাদের বেশিরভাগই ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। হাতে গোনা কয়েকজন আছে যারা নতুন নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে। এটা গেল গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের কথা।  

পরে একটা তথ্য জানতে পারলাম এই গেম খেলতে নাকি টাকা পয়সা খরচ করতে হয়। গেমের মধ্যে ক্যারেক্টার নানা রকম ফিচার এসবের পিছনে নাকি ভালো পরিমাণ টাকা খরচ করা লাগে। আমি যেহেতু এসব গেম খেলি নাই তাই জানি না কি কি জায়গায় টাকা খরচ করতে হয়।

তো আমি আমার গ্রামের আশেপাশে যারা এসব গেম খেলে তাদের থেকে ডাটা কালেক্ট করলাম। সেখান থেকে হিসাব করে যা পেলাম সেটা হল এরা গেমের পিছনে একেকজন গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো ব্যয় করেছে। কিছু কিছু পাবলিক তো ৫০ হাজার টাকার উপরও নাকি খরচ করেছে। এদের সবার পরিবারের আর্থিক অবস্থা যে স্বচ্ছল তা কিন্তু নয়।  

এক জনের পরিবারের ঘটনা হল ছেলে দাবি করেছে স্মার্টফোন কিনে দিতে হবে তা না দিলে সে আগামি দিন থেকে দিন মজুরের কাজ করে ফোন কিনবে। এছাড়া আরও রয়েছে ছেলেকে স্মার্টফোন কিনে না দেওয়ায় সে তিন দিন ধরে না খেয়ে ছিল। তখন ঐ পিতাকে এক প্রকার নতি স্বীকার করেই স্মার্টফোন কিনে দিতে হয়েছে। এরকম আরও অনেক ঘটনা রয়েছে।   তারা গত একবছরে বইয়ের পিছনে সময় না কাটালেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা গেম খেলে কাটিয়ে দিচ্ছে।  

বিকালে মাঠে গেলে আরেকটা বিষয় খেয়াল করি এদের মুখের ভাষা। এরা মুখ দিয়ে গালাগালি ছাড়া কথাই বলতে পারে না। কি সব বিচ্ছিরি এদের মুখের ভাষা। স্মার্টফোনে গেম খেলে আর গালাগালি করে।  

এখন প্রশ্ন হল এই যে গেমের পিছনে এতো টাকা ব্যয় করতেছে। কেন করতেছে? এর পিছনের সাইকোলজিটা কি? এটা থেকে তারা কি পরিমাণ বেনিফিট পাইতেছে?  হ্যাঁ, আরেকটা কথা এদের মধ্যে ৫০% আবার সিগারেটও খায়।

এই টাকা গুলা তো অপচয় হচ্ছে। তাদেরকে এটা বুঝাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কে শুনে কার কথা।   এসবই ঘটছে আমাদের এই গ্রামে।

news24bd.tv/আলী