হযরত খানজাহানের দিঘীর আহত কুমিরের চিকিৎসা চলছে

দেশের দ্বিতীয় আধ্যাতিক রাজধানী বাগেরহাটে হযরত খানজাহান (রহ.) মাজার দিঘীর আহত একটি কুমিরকে দুদিন ধরে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। স্থানীয়দের সহায়তায় দিঘী থেকে কুমিরটিকে উপরে উঠিয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ ও সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধায়নে ১০দিন ধরে চলবে এই চিকিৎসা। মিঠাপানি প্রজাতির পুরুষ এই কুমিরটি গত ১৫ দিন আগে খানজাহান আলীর দিঘীর জালে আটকা পড়ে। দিঘীকে অবৈধ উপায়ে জাল পাতা ওই চক্রটি কুমিরের চোখসহ শরীরে আঘাত করে তাদের জাল ছাড়িয়ে নেওয়ার পর থেকে কুমিরটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বন্ধ করে দেয় খাওয়া-দাওয়া।  

এরআগে খানহাজান আলী দিঘীর জালে আটকা পড়ে একাধিক কুমিরের মৃত্যু হয়। আহত এই কুমিরটিসহ দুটি কুমির মারা গেলেই শেষ হয়ে যাবে খানজাহানের দিঘীর চলমান ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ।

তবে, এবার জেলা বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের নির্দেশে আহত এই কুমিরটিকে দিঘী থেকে তুলে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা।

বাগেরহাটে ৬ শতাধিক বছর ধরে হযরত খানজাহান (রহ.) আমল থেকে মাজার শরীফের দিঘী বসবাস মিঠাপানি প্রজাতির কুমিরের। হযরত খানজাহানের মাজার শরীফের দিঘীর এই কুমির ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। খানজাহানের ভক্ত-আশেকানসহ দেশ-বিদেশের পর্যটকরা তার মাজার শরীফে এসে কুমির দেখে থাকেন। কেই-কেউ আবার দিঘীর এই কুমিরের খাদ্য হিসেবে মুরগী ও ছাগল দিয়ে থাকে। বর্তমানে মাজার দিঘীতে মিঠাপানি প্রজাতির মাত্র একটি পুরুষ ও একটি মা কুমির রয়েছে। মাজার দিঘী থেকে খাদেমদের সহয়তায় রাতের আধারে একটি চক্র অবৈধ ভাবে জাল পেতে মাছ ধরে থাকে। ওই চক্রটির পাতা জালে গত ১৫ দিন আগে আটকা পড়ে পুরুষ কুমিরটি। ওই চক্রটি কুমিরের চোখসহ শরীরে আঘাত করে তাদের জাল ছাড়িয়ে নেওয়ার পর থেকে কুমিরটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বন্ধ করে দেয় খাওয়া দাওয়া।

এর আগে খানহাজান আলী দিঘীর জালে আটকা পড়ে একাধিক কুমিরের মৃত্যু হয়েছে। কুমির আহতের বিষয়টি নজরে আসার পর মাজার দিঘীর পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা বিনা বেগম কুমিরটির সুচিকিৎসার জন্য ২৯ জুন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। এরপর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের নির্দেশে আহত কুমিরটিকে দুইদিন ধরে চেস্টার পর বুধবার দুপুরে দিঘী থেকে তুলে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান, সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কুমির বিশেষজ্ঞ আজাদ কবির চিকিৎসা দেয়া শুরু করেন। প্রায় ৫০ বছর বয়সের আহত এই কুমিরটির চোয়ালের মাঝে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। একটি চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছে না। অন্য চোখটিতেও আঘাত পেয়েছে। ১০ দিন উপরে রেখে আহত কুমিরটিকে চিকিৎসা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাণী সম্পদ বিভাগ ও সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির বিশেষজ্ঞ।

হযরত খানজাহানের মাজার শরীফের প্রধান খাদেম শের আলী ফকিরসহ স্থানীয়রা বলছে, খানজাহানের দিঘীতে রাতের আধারে জাল পেতে মাছ ধরা বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। একই সাথে তারা দিঘীতে জাল পাতা বন্ধ করা না গেলে অবশিষ্ট দুটি কুমির জালে বেঁধে মরা পড়ার পাশাপাশি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ৬ শতাধিক বছর ধরে ইতিহাস-ঐতিহ্য শেষ হবার।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কুমির বিশেষজ্ঞ আজাদ কবির গতকাল (বৃহস্পতিবার) জানান, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও’র মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নিদের্শে আহত কুমিরটিকে খানজাহানের দিঘী থেকে উপরে উঠানোর পরে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি। কুমিরটির চোয়ালের মাঝে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। কুমিরটি একটি চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছে না। অন্য চোখটিতেও ঝাপসা দেখছে। যে কেউ চোখে ও চোয়ালে আঘাত করার কারনে কুমিরটি গুরুতর আহত হয়েছে। কুমিরটিকে দুটি ইনজেকশনসহ গত দুদিনধরে বিভিন্ন প্রকার অসুধ দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার সাথে পরামর্শক্রমে ১০ দিন পর্যবেক্ষণের জন্য পানির উপরে রাখা হয়েছে। আহত কুমিরটি বয়স প্রায় ৫০ বছর। কুমিরের অবাধ চলাচলের জন্য খানজাহানের দিঘীকে জাল পেতে মাছ ধরা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ ও ঘুমের অসুধ খাওয়ানো বন্ধ করা না গেলে এই দিঘীর অবশিষ্ট বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মিঠা পানির কুমির দুটিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে শংঙ্কা প্রকাশ করেন এই কুমির বিশেষজ্ঞ।

বাগেরহাট জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান বলেন, কুমিরটিকে উপরে উঠানোর পরে আমরা তাৎক্ষণিক কিছু ওষুধ প্রয়োগ করেছি। কুমিরটির চোখ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। বৃহস্পতিবারও কুমিরটি চোখ খোলেনি। আহত কুমিরটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা কুমিরটিকে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। আশা করছি আহত কুমিরটিকে সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব হবে।

news24bd.tv / তৌহিদ