দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি, দুর্ভোগ চরমে

ঘাটে এসেছি রাত সাড়ে ১১টায়। সারারাত সিরিয়ালে। এখন সকাল ১১টা। তবুও সিরিয়ালে। ফেরির দেখা পাইনি। কখন পাব জানি না। চালকের সিটে বসে রাত কাঁটাতে হলো। চোখে ঘুম। এভাবে যেতে হবে ঢাকায়। কথাগুলো বললেন চুয়াডাঙ্গা থেকে গরুবাহী ট্রাক (ঢাকা-মেট্রো-১৬-৩২৪৩) নিয়ে আসা চালক হিমেল।  

তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা সুরে বললেন, শুক্রবার বেলা ৫টা দিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে ছেড়ে এসেছি। এই সিটে বসে রাত কাঁটাতে হলো। ঘুমে চোখ ভেঙ্গে আসছে। তবে, ঘুমালে কি হবে। এভাবে ঢাকায় গিয়ে গরু নামাতে হবে। আবার ফিরে আসতে হবে।

এ সময় পাশে থাকা একটি ট্রাক চালক এগিয়ে এসে বললেন, চোখের ঘুম নিয়ে আমাদের গাড়ি চালাতে হয়। জীবনে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করি। রেস্ট নেওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। সারারাত রাস্তায় কাঁটাতে হলো। ঘুম নেই, গোসল নেই। ফুট পথের খাবার খেতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেঁটে গেলেও ফেরিতে উঠতে পারিনি। আরও কয় ঘণ্টা লাগবে বলতে পারছি না। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে গরমের মধ্যে গরুগুলো অসুস্থ্য হয়ে পরছে।  

সাতক্ষীরা থেকে আসা রেজাউল নামের এক গরু ব্যবসায়ী বলেন, ১২টি গরু নিয়ে ঢাকার উদ্দ্যেশে যাচ্ছি লাভের আশায়। ধার দেনা করে ব্যবসায় নেমেছি। কিন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে যে পরিমান দুর্ভোগ। এতে গরু গুলো অসুস্থ্য হয়ে পরছে।  

শনিবার সকালে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকায় সরেজমিন এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমনি চিত্র দেখা যায়। এদিকে দৌলতদিয়া ফেরি-লঞ্চ ঘাটে ঘরমুখি যাত্রীদের উপচে পরা ভির রয়েছে। পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া জন্য অনেকে ঘরমুখি হয়েছে। এ সময় দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটে সামাজিক দুরত্ব বজায় না রেখে যাচ্ছে ঘরমুখি যাত্রীরা।  

সকালের এই চিত্র বেলা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে যানবাহনের চাপ একটু কমতে থাকে। বিকেল ২.৩০মিনিট সময় দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কে প্রায় দেড় শতাধিক গরুবাহী ট্রাক ও ২শতাধিক যাত্রীবাহী বাস পারের অপেক্ষায় রয়েছে। ঘাট সংশ্লিষ্টদের দাবি এখন যানবাহন কমে আসলেও সন্ধ্যার পর থেকে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পায়।  

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা পোর্ট অফিসার মাসুদ পারভেজ জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং আরিচা কাজিরহাট নৌরুটে এমভি ও এমএল লঞ্চ সহ মোট ৩৭টি লঞ্চ চলাচল করছে। তিনি দাবি করে বলেন, এই দুই নৌরুটে কোন লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যেতে পারছে না। সকল লঞ্চে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ধারন ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে।  

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শিহাব উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ৮টি রোরো (বড়) এবং ৬টি ইউটিলিটি (ছোট) সহ মোট ১৪টি ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় পারে ৪টি করে ঘাট রয়েছে। তিনি বলেন, গবাদি পশুবাহী অতিরিক্ত ট্রাকের কারণে ঘাটে চাপ রয়েছে। কোন যানবাহন নদী পারাপার করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার সমস্যা হচ্ছে না।  

আরও পড়ুন:

২৩ জুলাই থেকে কঠিন লকডাউন নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আজ যেসব এলাকায় ব্যাংক খোলা আছে অভিনেতা নিলয় করোনায় আক্রান্ত

খুলনায় করোনায় আরও ১১ জনের মৃত্যু

news24bd.tv / কামরুল