চলনবিলের পথে পথে ভাসমান হাঁসের খামার

চলনবিলে প্রবেশ করলেই পথে পথে চোখে পড়বে ভাসমান হাঁসের খামার। এক সময় বর্ষাকালে বানের পানি এলে জাল বুনন আর মাছ ধরার ধুম পড়ে যেত চলনবিল এলাকার মানুষের মধ্যে।  

তবে নানা কারণে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না চলনবিলে। তাই এখানকার অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কাটছে দুর্বিষহ জীবন। এর থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে গিয়ে কিছু মানুষ সন্ধান পেয়েছে বিলে হাঁস পালনের মতো লাভজনক পেশার। ফলে সংসারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা।  

চলনবিলে হাঁস পালনের সব থেকে বড় সুবিধা বিলে পানি থাকা অবধি প্রায় ছয় মাস হাঁসের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় শামুক, ঝিনুকসহ জলে বাস করা নানান প্রাণী। এতে হাঁস পালনে খরচ কমে। বাড়ে লাভের পরিমাণ। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বছরের পুরো সময় অস্থায়ী খামার গড়ে হাঁস পালন করে জীবিকা নির্বাহ করছে এসব পরিবারের ছেলেরা।

আরও পড়ুন

অভিষেক ম্যাচে খেলতে নেমে আঘাতে হাসপাতালে ক্রিকেটার

বাবাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা, আটক ৫

মাঠে ঢুকে পড়া সেই মোস্তাফিজের ভক্তের ৭ দিন রিমাণ্ড চায় পুলিশ

মূলত হাঁসের ডিম বিক্রি করেই মিটছে সংসারের খরচপাতি। চলছে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা। কমছে ঋণের বোঝাও। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বা এ ধরনের খামার গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা স্থানীয়দের।

নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে চলনবিলে ছোট বড় প্রায় ৪৫১টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে রাজহাঁসের খামার অর্ধেক। হাঁস পালনকারীরা পাতিহাঁস এবং রাজহাঁস উভয় প্রকারের হাঁস পালন করে মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণ করে। এসব খামারে হাঁস আছে দেড় লাখেরও বেশি। আবার স্থানীয় পরিবারগুলোও পালন করছে প্রায় ৭-৮ লাখ হাঁস। এতে বেকারত্ব কমার পাশাপাশি বেড়েছে আয়। পূরণ হচ্ছে স্থানীয়দের আমিষের চাহিদাও।

বিলে উচ্ছিষ্ট বোরো ধান ও শামুক হাঁসের প্রধান খাদ্য এবং অল্প টাকা বিনিয়োগে ব্যবসা সফল হওয়ায় বর্তমানে পুরুষরাই বিকল্প পেশা ও বেকারত্ব দূর করার জন্য অস্থায়ী খামার গড়ে হাঁস পালনের দিকে ঝুঁকছে।

সরেজমিনে চলনবিলের বিভিন্ন স্থানে হাঁসের খামারগুলোতে দেখা যায়, সকাল হলেই খামারিরা হাঁস নিয়ে রওনা দেন বিলের পানিতে। সন্ধ্যার আগে আবার ফিরে আসে খামারে। কেউ আবার পানিতেই জালের ঘের করে হাঁসের খামার করেছেন।

চলনবিলের খামারি হাসমত আলী জানান, তিনি ৩০০টি হাঁস পালন করেন। সকালে হাঁসগুলো বিলে চলে যায়। সারাদিন শামুক-ঝিনুক খায়। তিনি নিজেও কিছু খাবার দেন। পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ ছাড়াও হাঁস বিক্রি করে আয় করছেন তিনি।  

চলনবিলের আরেক খামারি আজগর আলী জানান, তিনি সারা বছরই হাঁস পালন করেন। এখন তার খামারে ক্যাম্বেল জাতের ৬০০টি হাঁস রয়েছে। ৪-৫ মাস বয়সী হাঁস কেনেন। সাড়ে ৫ মাস বয়স থেকে ডম দেওয়া শুরু করে। এখন তার খামারের ৫০০টি হাঁস ডিম দিচ্ছে। বছরে খরচ বাদে ৩-৪ লাখ টাকা লাভ থাকে তার।

তিনি আরও বলেন, একটি হাঁস গড়ে বছরে ৩০০টি ডিম দেয়। তিন বছর পর ডিম দেওয়া কমতে থাকে। তখন মাংসের জন্য হাঁসগুলো বিক্রি করেন। বর্তমানে প্রতিটি ডিম ১১-১২ টাকা ও প্রতিটি হাঁস গড়ে ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

খামার শ্রমিক মো. বেলাল উদ্দিন জানান, সকাল ৭টায় হাঁস ছাড়ি। তারপর ডিমগুলো তুলা হয়। ৩০০-৩৫০টি ডিম হচ্ছে এখন। এখন বিলের খাবার না পাওয়াতে অনেক আয়ের সংখ্যা কমে গেছে। হাঁসের খাবার বেশি দিতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে গেছে।

নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, জেলার প্রতিটি খামারেই অন্তত ৩-৪ জন কাজ করছে। খামারগুলোতে প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার হাঁস পালন করা হচ্ছে। বিলে পানি বেশি থাকলে খরচ তেমন হয় না। পানি না থাকলে খরচ সামান্য বাড়ে। বছরে একেক খামারির কমপক্ষে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়।

তিনি আরও বলেন, নাটোর জেলায় হাঁস পালন করছে আরও ৩০-৪০ হাজার পরিবার। সেখানেও প্রায় ৭-৮ লাখ হাঁস আছে। প্রতিটি পরিবার বছরে আয় করছে ২০ হাজার টাকা করে। এ খাতে আরও মানুষকে সংযুক্ত করার কাজ করে যাচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

news24bd.tv/ কামরুল