যে নদীকে ঘিরে পুন্ড্র সভ্যতা, সেই করতোয়া আজ মৃতপ্রায়

এক সময় বড় বড় পালতোলা নৌকা যাতায়াত করতো করতোয়া নদীতে, পণ্য আনা নেয়া হতো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। নদীকে কেন্দ্র করে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার হয়েছিল, গড়ে উঠেছিল সভ্যতা। সেদিনের বিশালাকায় স্রোতস্বিনী করতোয়া আজ কঙ্কালসার, অস্তিত্ব হারিয়ে মরা খালে পরিণত।

বগুড়া শহরের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া প্রমত্তা নদীটি দখলে দূষণে আজ মৃত প্রায়। করতোয়া নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনাসহ দখল দূষণ মুক্ত করতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন হলেও করতোয়া ফিরে পায়নি আগের রুপ।

আড়াই হাজার বছর আগে যে নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল পুন্ড্র সভ্যতা, কালের আবর্তে সেই করতোয়া নদী আজ মৃতপ্রায়। ঢেউ নেই, পানি নেই, পাড় নেই। এসবের বদলে নদীর পাড়ে সুউচ্চ ভবন, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শহরের বর্জ্য ফেলার ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নদী বাঁচাতে জেলা প্রশাসন থেকে দখলদারের তালিকা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

বগুড়া শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার দখল আর দূষণ। এঁকেবেঁকে চলা নদীর গতি মানব সৃষ্ট দুর্যোগের কবলে। নদী শীর্ণকায় এক খাল। কোথাও সামান্য পানি তাও দূষণে কালো। সেতুর নিচ দিয়ে নদীর প্রশস্থ সীমারেখা বোঝা গেলেও পানির প্রবাহ জীর্ণ নালার মতো। নদীর বুকে অনেক জায়গায় চাষাবাদও হচ্ছে।

নদী বাঁচাতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করে। মহামান্য আদালত করতোয়া নদীর পানিপ্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং বর্জ্য না ফেলতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করেন। আদালতের নির্দেশনায় নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে প্রশাসনের তৎপরতা দেখা গেলেও দূষণ রোধে কোনো উদ্যোগ নেই।

খরস্রোতা করতোয়া নদী আর নদী বলে মনে হয় না বলে জানালেন স্থানীয়রা। তার বলছেন, দখল দূষণে নদীটি এখন মৃতপ্রায়। প্রভাবশালীরা নদীটিকে দখলে নিয়েছে।

নদী পূন:খননসহ সৌন্দর্য বর্ধনে প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবী জানালেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান রনি।

অবৈধ দখল উচ্ছেদে প্রশাসনের তৎপরতা দেখা গেলেও দৃশ্যমান ফল নেই, দখল দণষণমুক্ত করার দাবী জানালেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো: জিয়াউর রহমান।

নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, গৃহিত প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হলে করতোয়ার নাব্যতা ফিরে আনতে কাজ করবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীমো: মাহাবুবুর রহমান।

তবে নদী সুরক্ষায় গৃহিত প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হলে করতোয়ার নাব্যতা ফিরে আনতে কাজ করবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো: জিয়াউল হক।

বগুড়া অঞ্চলে ১২৩ কিলোমিটার করতোয়া নদী জেলার শেরপুরের চান্দাইকোনায় বাঙালি নদীতে গিয়ে মিলেছে। ১৯৮৮ সালে বন্যার সময় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের খুলশিচাঁদপুর এলাকায় বাঁধ ও সুইচ গেট নির্মাণের মাধ্যমে করতোয়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়।

আরও পড়ুন

কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কায় প্রাণ গেল মোটরসাইকেল আরোহীর

news24bd.tv এসএম